Thursday, December 6, 2018

ছেলেবেলার শীত

আমাদের এখানে হেমন্ত কখন যে আসে ঠিক টের পাওয়া যায় না। দুগগা ঠাকুর বা কালি ঠাকুর জলে পড়লেই গা ছ্যাঁত ছ্যাঁত করতো।  ছেলেবেলায়, পুজোর রেশ মিটতেই মা কাকিমারা যখন আলমারি থেকে উল কাঁটা বের করতেন, তখন বোঝা যেত আর কিছু দিন বাদেই শীত আসছে। গ্রাফ পেপারে রকমারি ডিজাইন এঁকে সেগুলো অনায়াস দক্ষতায় দুটোমাত্র কাঁটার সাহায্যে রঙিন উল দিয়ে ফুটিয়ে তুলতেন বাড়ীর মা কাকিমারা। বাড়িতেই তৈরি হত সোয়েটার, মাফলার, টুপি, মোজা, গ্লাভস আরো কত কি।

দু তিন দিন অন্তর বুকের ছাতির মাপ নেওয়া হত। সাথে গলা ও পিঠেরও। আমরা অপেক্ষায় থাকতাম কবে বোনা শেষ হবে। আর পরদিনেই ইস্কুলে পরে যাব সেটা।

ইস্কুলে গিয়েও বন্ধুর মায়েরা কাছে ডেকে নিতেন নতুন ডিজাইন গুলো নিজেরা তুলে নিতে।

অনেকের বাড়িতে কুরুশের কাজও করা হত। এখন আর সেসব খুব একটা দেখতে পাই না। ছেলেবেলায় পুরানো সোয়েটার, যেগুলো ছোট হয়ে গেছে, তা থেকে উল খুলে নিয়ে বড় বড় উলের গোলা বানাতাম আমরা। সে এক বড় মজার ব্যাপার ছিল। সেই খোলা উল দিয়ে আবার তৈরি হত নতুন সোয়েটার, নতুন ডিজাইনের।

সত্যজিৎ বাবুর সিনেমায় এখনো দেখা যায় বাড়ির মহিলা দের উলের সোয়েটার বানানোর ছবি। সেলুলয়েডেই সাক্ষী থেকে গেছে।

কোন সান্টাক্লজ আমাদের ছেলেবেলায় শীত বয়ে আনতেন না। শীত বয়ে নিয়ে আসতেন জয়নগরের মোয়াওলা মাথার ডালা ভরে। ভরা দুপুরে হেঁকে যেতেন সুরেলা গলায়, জয়নগরের মোয়া, নলেন পাটালি গুড়।

কেক খাওয়ার রেওয়াজ বরাদ্দ ছিল বছরে একদিনই, বড়দিনে। অবধারিত ভাবে চলে আসত বড়ুয়া বেকারি। পেস্ট্রি খাওয়ার চল হয়েছে অনেক অনেক পরে।

আখের রসের গাড়ি ছিল, কিন্ত আমরা তার থেকেও বেশি মজা পেতাম দাঁত দিয়ে ছাড়িয়ে খেতে। মুখ ছড়ে গেলেও এর মজা ছিল ঢের বেশি। শীতের দুপুরের নরম রোদ্দুর পিঠে মেখে আখ খেতেও এখন আর খুব একটা কাউকে দেখি না।

ভরা শীতে সব পাড়া ম ম করতো নলেন গুড়, পাটালির গন্ধে। পিঠে, পুলি, পাটিসাপটা, রসবড়া আরো কত কি। এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায়। এখন তো প্রায় সবই দোকানে বিক্রি হয়।

রবিবারের সকালে ধপধপে সাদা ফুলকো লুচি দিয়ে পয়রা গুড় খাওয়ার জন্যই আবার এখানে জন্মানোর ইচ্ছে জাগে মনে। অমৃতের স্বাদ কি রকম জানি না তবে সেটা নিশ্চিত এর থেকে ভাল হতেই পারে না।

শীতে ফি বছর সার্কাস ময়দানে আসতো অলিম্পিক সার্কাস। কমলালেবুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে অবাক বিস্ময়ে দেখতাম ট্রাপিজের খেলা। হাসিতে ভরিয়ে তুলতেন জোকার কাকুরা। অর্কেস্ট্রা বাজতো সার্কাসে। হ্যা ঠিকই পড়লেন, অর্কেস্ট্রা বাজতো। এখন তো প্রিরেকর্ড করা বাজনা বাজে। হাতি, বাঘ, সিংহ, জলহস্তীরাও ছিল সার্কাসের অঙ্গ। সেসব হারিয়েছে বহুদিন হল।

শীত পরলেই মনে পরে আমাদের পাড়ার মাঠে পুতুল নাচের আসর বসতো। তারা আসতো রকমারি পালা নিয়ে। প্রচার হত রিক্সা গাড়িতে চোঙা লাগিয়ে ও সাথে হাতে আঁকা পোস্টার। মাঠে চট বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা থাকতো। চলতো প্রায় দিন পনেরো। ভারি মজার ছিল সেই সময় গুলো।

আসতেন এক সাইকেল চালক দাদা। দিন সাতেকের জন্য। অবিরাম সাইকেল চালিয়ে যেতেন তিনি। মোটেই নামতেন না সাইকেল থেকে। গোল হয়ে ঘুরতেন মাঠ জুড়ে। দু এক দিনের মধ্যেই পাড়ার একজন হয়ে উঠতেন তিনি। অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকতাম তার কুশলতা দেখে। আমাদের ছেলেবেলার হিরো হয়ে উঠতেন অল্পদিনেই। গায়ে পুরানো টিউব লাইট ভাঙতেন। আর শেষ দিনে মাটির নিচে কবরে যেতেন। অনেকক্ষন মাটির নিচে থাকতেন। সে সময় কেউ একটাও কথা বলতো না।পরে বের করে আনা হত অচৈতন্য অবস্থায়। সুস্থ করা হত দুধ রুটি দিয়ে। একাজে এগিয়ে আসতেন পাড়ার প্রায় সব মহিলারাই।

শীত মানেই কাঁধে গাঁটরি নিয়ে হাজির হতেন কাশ্মীরি শাল ওলা। যাদের সামর্থ্য ছিল, তারা কিনতেন। আমাদের কখনো কেনা হয়ে ওঠেনি।

যখন আমরা খুব ছোট, তখন একবার শহরে এসেছিল রাশিয়ান সার্কাস। এক্কেবারে অরিজিনাল। খুব সম্ভবত নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ঠিক মনে নেই। অনেক বন্ধুরা গিয়ে দেখে এসেছিল।

শীত মানেই অবধারিত ভাবে চলে আসে, কফি খাওয়ার কথা। ভেতো বাঙালির কফি বিলাস। সাধ পুরন করতো নেসক্যাফে।

ইডেন গার্ডেনে ক্রিকেট খেলাটা তখন শীতেই হত শুধুমাত্র। সারা বছর জুড়ে ক্রিকেট খেলার চল ছিল না সে সময়। নরম রোদ গায়ে মেখে টেস্ট ক্রিকেট দেখার মাহাত্য এখন হারিয়েছে অনেকটাই।

তবে এখনো শীত আসে এ শহরে। অন্যভাবে। বেশিরভাগ ছেলেবেলার মজাই হারিয়ে গেছে চিরতরে। বয়স বাড়ছে। অল্পেই শীত ধরে এখন।

সৌমিক মুখোপাধ্যায়
ডিসেম্বর ৪, ২০১৮। মঙ্গলবার

Sunday, September 30, 2018

অনুরোধ

২০১০ সালের আজকের দিনেই BIFR এ চলে গেছিল এই সংস্থাটি। শেষের শুরু আজকের এই দিন টা থেকেই।

দেখতে দেখতে অনেক গুলো বছর পেরিয়ে গেলো। ছবি গুলো আজও চোখের সামনে ভেসে আসে। পুজোর আগে বিশ্বকর্মা পুজোর জাঁকজমক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বোনাস পেয়ে শ্রমিক কর্মচারী দের আনন্দচ্ছল মুখ। সব কেমন যেন হারিয়ে গেলো।

আরিয়াদহ, কামারহাটি, দক্ষিণেশ্বর অঞ্চলে ইন্ডিয়া ফয়েলস লিমিটেড এর কথা বলছি। এলাকায় বয়স্ক জনেরা ভেনেস্তা নামেই এখনো অনেকে ডাকেন। যদিও এই নামকরন ১৯০৫ সালের। শেষমেশ নাম বদল হয়ে হল এস ডি এলুমিনিয়াম।

এলুমিনিয়াম ফয়েল প্রস্তুতকারক এই সংস্থা আমাদের অঞ্চলের একটা ল্যান্ডমার্ক ছিল। ব্রিটিশ আমলের এই কোম্পানি তে কাজ করার স্বপ্ন দেখতো শিক্ষিত মানুষজন। জীবিকার্জনের জন্য এলাকায় প্রসিদ্ধি ছিল এই সংস্থার।

পরবর্তী সময়ে খৈতান গোষ্ঠী যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন এই সংস্থাকে। এ সবই এখন ইতিহাস।

ভীষন ভীষন খারাপ লাগে যখন দেখি এই রকম নামী একটা কোম্পানি চোখের সামনে ধংস্ব হয়ে গেল। ভুল বললাম নস্ট করে দেওয়া হল। ম্যানেজমেন্ট ভুল, নাকি শ্রমিকদের দিশাহীনতা, নাকি অন্য কিছু তা জানি না। তবে ভিতরে ভিতরে রক্তাক্ত হই বন্ধুস্থানীয়দের দেখে। যারা এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।

শুনতে পাই বকেয়া টাকা, গ্রাচুইটির টাকা, পিএফ এর জমানো টাকা কিছুই এনারা পান নি। কবে পাবেন তাও বোধহয় কেউ জানেন না। গা শিঊরে ওঠে। মাইনে পেয়েও যেখানে এই দুর্মুল্যের বাজারে সংসার চালানো কস্টকর, সেখানে এনাদের চলে কি করে। অনেককেই দেখি বিকল্প কাজের সন্ধান করতে।

খুব খারাপ লেগেছিল দেখে যে এনারা কেনো কোনো আন্দোলনে গেলেন না। রথতলার মোড়ে কিছুদিন লিফলেট বিলি করে, কিছুদিন মাত্র অবস্থান করে, ধর্মতলায় লিফলেট বিলি করে কেন এনারা ক্ষান্ত হলেন? নিজেদের কথা আরো বৃহত্তর পরিমন্ডলে ছড়িয়ে দিলেন না কেন? কেন মাত্র এক দু দিন বাজারী কাগজে ছাপা হল এনাদের দুর্দশার কথা। যেখানে শিল্প বন্ধের জন্যে দীর্ঘ দিন অবস্থান বিক্ষোভ হয়, সেখানে জলজ্যান্ত একটা কারখানা এভাবে কেন বন্ধ হয়ে গেলো? আরো তেজদ্বীপ্ত হওয়া যেত না কি?

জানি প্রশ্ন গুলো সহজ।
কিন্তু আমার কাছে উত্তর জানা নেই। কারোকাছে থাকলে জানাবেন।

যারা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তাদের কাছে আমার বিনম্র অনুরোধ, একটু মানবিকতা দেখান। কারখানার গেটে নরনারায়ন সেবার মতন খাবার ব্যবস্থা না করে, সম্মানের সাথে মাথা তুলে বাঁচতে সাহায্য করুন কর্মচারীদের। ভবিষ্যতে কারখানা খোলার সম্ভবনা যদি একান্ত নাও থাকে, এনাদের প্রাপ্য বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাটা অন্তত করুন।

সব্বাই ভাল থাকলে, তবেই আমরা সকলে ভাল থাকব।
পুজো আসছে, রাস্তায় রাস্তায় আলো লাগছে। কিন্তু এত আলোতেও, এলাকার কর্মহীন  মানুষের মনের অন্ধকার দূর হবে কি?

পরিশেষে বলি ইন্ডিয়া ফয়েলস ছাড়াও অন্যান্য অনেক কারখানা আজ এই এলাকায় বন্ধ হয়ে আছে। আর্থ সামাজিক অবস্থা ভয়াবহ। অনুরোধ কোন রাজনীতি খুঁজবেন না এই লেখায়। যদি কিছু মাত্র ভুল বলে থাকি, তবে ভুল টা শুধরে দেবেন এই আশা রাখি।


সৌমিক মুখোপাধ্যায়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

Saturday, September 1, 2018

গন্ধ

অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে দিনুকে শুধুমাত্র তার ওই বোঁচা চ্যাপ্টা নাক টার জন্য। ছেলেবেলায় মা ঠাকুমা অনেক চেষ্টা করেছিলেন, যদি নিয়মিত তেল মালিশ করে নাক টাকে কিছুটাও লম্বা করা যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছুটি হয় নি।

ইস্কুলে পড়ার সময় বন্ধুরা কেবল হাসাহাসি করত। পাড়ার মেয়েরাও আড়ালে তাকে দেখে হাসত। সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকত দিনু। শুধুমাত্র ওর এই  খ্যাঁদা নাকটার জন্য।

কারো বিষয়ে কারনে অকারনে কখনোই নাক গলাতো না দিনু। নাকই নেই, কাজেই তা গলানোর প্রশ্নও নেই। সেদিক থেকে সে ছিল নিশ্চিন্ত।

তবে, ছেলেবেলায় মায়ের গায়ের গন্ধটা কিন্তু আজো নাকে লেগে আছে। মমতা মাখা উনুনের ধোঁয়া লেগে থাকা অদ্ভুত এক গন্ধ। মাকে হারিয়েছে সেই কোন কালে, বাবাকে তো চোখেই দেখেনি। কিন্তু এখনো মাঝে মাঝে সেই গন্ধটা পায় দিনু। বিশেষ করে খুব ভোর বেলায়। মা ফিরে ফিরে আসে সেই গন্ধটার মধ্যে দিয়ে।

ভাত ফোটানোর গন্ধ, তেলেভাজার দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাকে ভেসে আসা গন্ধ, সদ্যজাত রসগোল্লার গন্ধ, রোল কাউন্টার থেকে ভেসে আসা ডিম ভাজার গন্ধ শুঁকেই পেট ফুলে ওঠে দিনুর। কেনার তো আর পয়সা নেই। ভাঁড়ে মা ভবানি।

গ্রীষ্ম কালে মাটি তেতে ওঠার গন্ধ, বিষ্টির পর মাটির সোঁদাসোঁদা গন্ধ, দুগগা পুজোর ঠিক পরে পরেই ছাতিম ফুলের গন্ধ, শীতকালে সোয়েটারের গন্ধ প্রতিটাই ভীষন রকম আলাদা। প্রতিটাই খুব মায়াবি। কালজয়ী।

চল্লিশ পেরোল গত জুনে। কিন্তু এখনো নাকে লেগে আছে রেশন দোকানের পত্রালি খাতার গন্ধ। গম ভাঙানোর গন্ধ। হঠাত করে নাকে আসা কোন ধুপের গন্ধে মনটা আকুলি বিকুলি করে ওঠে। আর সেই অগরুর গন্ধটা যেটা মায়ের শরীরের ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল খাটে তোলার পর। অসহ্য অতি অসহ্য সেই গন্ধ।

এখন দিনরাত চায়ের দোকানেই কাটে দিনুর। পাড়ার ছোট ছোট ছেলেরা ঢিল ছুড়ে মারে, রাগায়, ভেঙায়।

ইদানীং পাড়ার আস্তাকুঁড়ের খাবারে ছেলেবেলার গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করে দিনু রোজ। কোন খাবারের দোকানের সামনে দাঁড়ালে গায়ে জল ছিটিয়ে তাড়িয়ে দেয় লোকে। যদিও তাতে দিনুর কিছুটা পেট ভরে। সর্দি হলেই তার যত কষ্ট।

অগাস্ট ২৮, ২০১৮। মঙ্গলবার।

পার করেগা...

অনেক শ্রাবন দেখলাম এই জীবনে। ছেলেবেলায় শ্রাবন বলতে ছিল সারা মাস জুড়ে  বাইশ তারিখের প্রস্তুতি। সকলের আদরের, প্রানের ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। গান, কবিতা, নাটক এই সব নিয়ে আট থেকে আশির মেতে থাকা। পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট মঞ্চ তৈরি করে শ্রদ্ধা জানানো।

ইদানীং শ্রাবন এলেই পথ চলতি সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। বিশেষ করে শনিবার সন্ধ্যের পর থেকেই রাজপথ চলে যেতে থাকে ভক্তদের হাতে। হঠাৎ করে মানুষের মধ্যে এত ভক্তি ভাব এল কোথা থেকে এই ভাবনা মনে চলে আসে বারবার।

এইসব ভক্তদের উতসাহিত করার জন্য পথের ধারে সারি সারি মনোরঞ্জন এর পসরা। অঢেল খাবারের আয়োজন।

আফশোস হয়, যারা এই খাবার এর আয়োজন করেন, তারা পালা করে সারা বছর ধরে যদি এই প্রচেষ্টা চালান, তাহলে গরীব মানুষ গুলো দুমুঠো খেতে পারে।

প্রশাসক যিনিই হোন, ধর্মকে ঘাঁটাতে কেউই সাহস পান না। তাই এদের বাড়বাড়ন্ত বেড়েই চলে। কি অসম্ভব এনার্জি লেভেল। তারিফ না করে পারা যায় না। কিন্তু সবটাই বাবার মাথায় ঢেলে শেষ হয়ে যায়।

তারস্বরে মাইকে বাবার জয়গান, সাথে মজুত সব রকমের বাবার প্রসাদ। বাচ্চা থেকে মাঝবয়সী সবাই প্রসাদ প্রার্থী। কাঁধে বাঁক। মুখ ভরতি লালথুতু যা মাঝে মাঝে ভরিয়ে দিচ্ছে রাজপথ। রাস্তা জুড়ে প্লাস্টিকের গ্লাস, কাপ, শালপাতার ঠোঙা।

এ কোন পথে চলেছে কোলকাতা? বাংলাভাষী সাধারন মানুষজন নিজেদের সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে মেতে উঠছে অন্য রাজ্যের সংস্কৃতি নিয়ে।

এ এক নতুন কালচার।
এক নতুন রাজনীতি।
এক নতুন ভীতি।
এক নতুন দুঃসময়।

১২ আগস্ট, ২০১৮। রোববার।

Monday, August 6, 2018

বন্ধু

আজ বন্ধুত্বের বিশেষ দিনে তোকে বড্ড মনে পড়ছে রে।

ইস্কুলের দিন গুলোতে চুটিয়ে ক্রিকেট ফুটবল খেলা। মিলনী মাঠের রাধাচূড়া গাছটার নিচে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেওয়া। ছুটির দিন গুলোতে অন্য ক্লাবের ছেলেদের সাথে ক্রিকেট ম্যাচ, ক্লাবের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ড বাজাতে যাওয়া। বেশ ছিল দিন গুলো। মনে হয় যেন এই তো সেদিনের কথা।

সময়ের নিয়মে আমরা সবাই আস্তে আস্তে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। দেখা সাক্ষাৎ কমে গেছিল। তবে যেখানেই দেখা হোক তোর হাসি মুখটা দেখলেই এক লহমায় মনটা ভাল হয়ে যেত।

অনেক পরে আমরা বন্ধুরা বুঝেছিলাম তুই খুব খুব ভাল অভিনেতা ছিলিস। চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি মনের কষ্ট ঢেকে ওরকম হাসির অভিনয় জগতের কোন অভিনেতা করতে পারবেন না।

যখন তোকে আর জি কর হাসপাতালে ভরতি করানো হল, তখনো মুখের হাসিটা একই রকম ছিল। অত্যন্ত সাবলীল সেই হাসি। জীবন টাকে খেলাচ্ছলে নিয়েছিলিস তুই।

অনেক বছর পর আমাদের ইস্কুলের বন্ধুদের আবার একটা প্ল্যাটফর্ম এ এনে দিয়েছিলিস। উপলক্ষ ছিলিস তুই।

তারপর মাঝে কয়েকটা দিন্র সুস্থতার অভিনয়। এখন ভারি অদ্ভুত লাগে মাঝে মাঝে, ওই শরীরে তুই কেন আবার ক্রিকেট খেলতে গেলি সেদিন। হ্যা আমরা সবাই জানতাম তুই খেলাটা ভালবাসতিস। খেলতিসও ভাল। তা বলে ওই শরীরে? জীবন টাকে খুব খেলাচ্ছলে নিয়েছিলিস তুই।

রোববার এর সকালে বাজার দোকান করে সবে মাত্র বাড়ি ফিরেছি, তখনই পেলাম খবরটা। বেশ কিছু সময় স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলাম। মনে পড়ছিল আমার বাবার কথা। শেষের দিকে এক একজন বন্ধু হারানোর বেদনায় ভেঙে চুরমার হতে দেখেছি তাকে। সেদিন নিজে উপলব্ধি করেছিলাম কারনটা।

খেলতে খেলতেই চলে গেলি তুই। বলের সাথে ব্যাটটাও তো ভাল করতিস বোকা। এত তাড়াতাড়ি আউট হতে হয়? টি টোয়েন্টি এত টানতো তোকে? চালিয়ে খেলতে গেলি কেন? জীবনের এই ক্রিকেট ম্যাচে আমরা সকলে একাই বিরাট কোহলি, একাই অশ্বিন, একাই ধোনি রে। একবারও ভাবলি না তুই আউট হয়ে গেলে টিম টার কি হবে?

এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে হয় রে বোকা। দেখ আজ আমরা কেমন ফেসবুক, হোয়াটস্যাপে বন্ধুত্বতা সেলিব্রেট করছি। ভুলে যাস না তোর নম্বর টা কিন্তু এখনো আছে রে আমাদের কনট্যাক্ট লিস্টে।

আজ ফ্রেন্ডশিপ ডের মেসেজ পাঠানোর সময় মোবাইলের স্ক্রিনে ফুটে উঠল রক্তিমের নাম টা। মন টা ভীষন ভারি হয়ে গেল আজ আবারও।

এই লেখা টা আজ শুধু তোরই জন্য রে রক্তিম।

যেখানেই থাকিস ভাল থাকিস বন্ধু। আবার ফিরে ফিরে আসিস আমাদের বন্ধু হয়ে।

হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে।
বন্ধুত্বের মৃত্যু হয় না।

আগস্ট ৫, ২০১৮। রোববার

Sunday, July 29, 2018

মেকানিক

পল্টুদার গ্যারেজ সকলেই একডাকে চেনে। দেখতে দেখতে বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেল। মনে হয় যেন এই তো সেদিনের কথা। পাড়ার গ্যারাজে ফাইফরমাশ খাটতে খাটতে কাজ শেখা। আগ্রহটা ছিল ছোট্ট থেকেই। কাজেই অল্প দিনের মধ্যে গাড়ির দক্ষ মেকানিক হয়ে উঠল পল্টু।

আগে চারচাকা গাড়ির অত রমরমা ছিল না। বেশির ভাগই এম্বাসেডর ও অল্প কিছু ফিয়াট, অনেক পরে এল মারুতি। আর এখন তো দম ফেলার সময় পায় না। হরেক কিসিমের গাড়ি। তবুও যেকোন গাড়ি একবার খুলেই নিমেষে বুঝে যেত সমস্যাটা ঠিক কোথায়। আর সেই মতন কাজ। পল্টু যেন সাক্ষাৎ বিশ্বকর্মা।

সকাল সাতটায় গ্যারেজ খুলে বন্ধ করতে করতে প্রতিদিন রাত এগারোটা বেজে যায়। ইদানিং তিনজন ছেলেকে কাজে লাগিয়েছে তাও সব্বাই চায় পল্টুদা একবার নিজে চেক করুক। তাতেই যেন সকলের শান্তি।

এক একদিন এক একটা গাড়ি বেশ ভোগায়। সমস্যা খুজে বের করতেই সময় চলে যায়। কিন্তু সারানো হয়ে গেলে এখনো এই বয়সেও বেশ রোমাঞ্চ জাগে।

মিউনিসিপালিটির এম্বুলেন্সটা গতকাল থেকে বেশ ভোগাচ্ছিল। গতকাল অনেক রাত অবধি দেখেও সুরাহা কিছুই হয় নি। তবে আজ সকালে এসেই প্রবলেম টা ধরতে পারল পল্টু। ড্রাইভার এসে নিয়ে যেতে পল্টু একগ্লাস চা খেয়ে আয়েস করে বিড়ি ধরাল। তিনটে ছেলে এখন কাজ করছে।

ইদানীং শরীরটা ভাল যাচ্ছে না।সকাল থেকেই আজ কেমন যেন মাথা ধরা ভাব, ঘাড়ে ব্যাথা। বেলা হতে ব্যাথাটা বাড়তে লাগল। আজ গ্যারেজ না খুললেই ভাল হত। এই সব ভাবতে ভাবতেই শরীরটা একেবারে ছেড়ে দিল। টুল থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল বিশাল শরীরটা।

তিনটে ছেলে দৌড়ে এসে শুইয়ে দিল মাটিতে। একজন তড়িঘড়ি করে সাইকেল নিয়ে ছুটল ডাক্তারখানায়। ডাক্তারবাবু দেখেই বললেন একটা ম্যাসিভ এটাক হয়ে গেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে।

মিউনিসিপালিটির এম্বুলেন্সটা এল। যেটাকে কিছুক্ষন আগেই সুস্থ করে ফেরত পাঠিয়েছেন পল্টুদা। স্ট্রেচারে তুলে এম্বুলেন্স ছুটল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। প্রায় আধঘন্টার পথ।

সরবিট্রেটটা জিভের নিচে দেওয়াতে এখন কিছুটা সম্বিৎ ফিরেছে। একটু জল খেতে চাইলেন। হুটার বাজিয়ে এম্বুলেন্সটা ছুটে চলেছে। মিনিট পনেরো পথ যাওয়ার পর মাঝ রাস্তায় একটা শব্দ করে গাড়ির স্টার্টটা বন্ধ হয়ে গেল। ড্রাইভার অনেক চেষ্টা করেও স্টার্ট করতে পারছে না। সময় ছুটে চলেছে। ওদিকে স্ট্রেচারে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন বিশ্বকর্মা পল্টুদা।

ড্রাইভার ও হেল্পারের দম ছুটে যাওয়ার অবস্থা। বেগতিক দেখে গ্যারেজের ছেলেটাও আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু কোন চেষ্টাই কাজে আসছে না। গাড়ির ভিতর ছটফট করছে পল্টুদা। কিছু একটা করা দরকার।

এইসময় যে লোকটাকে সবথেকে বেশি দরকার ছিল, সেই এখন গাড়ির ভিতর স্ট্রেচারে শুয়ে অসহায়, প্রায় অচেতন।

হঠাৎ করে ড্রাইভারের চোখ গেল পল্টুদার দিকে। স্ট্রেচারে শুয়েই কালিঝুলি মাখা হাতটা কোনক্রমে তুলে কি যেন ইশারা করছে পল্টুদা। ড্রাইভার ছেলেটা এগিয়ে গেল সেইদিকে।

গাড়ি বন্ধ হওয়ার আওয়াজেই আন্দাজ করেছিলেন সমস্যাটা। হাতের ইশারায় ড্রাইভারকে কোনমতে বুঝিয়ে দিতেই গাড়ি আবার স্টার্ট নিল। অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।

গ্যারেজের ছেলেটা পল্টুদার মুখের কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে চাইল জল খাবে কিনা। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পেল না। মাথাটা হেলে পড়েছে বাঁ দিকে। সারা মুখে প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট। এখন যেন আর কোন যন্ত্রণাই নেই পল্টুদার। চোখের কোল বেয়ে নেমে এসেছে শুকিয়ে যাওয়া জলের ধারা। এই জলধারা নিশ্চিত ভাবেই আনন্দের। এম্বুলেন্সটা এখন হুটার বাজিয়ে ছুটে চলেছে হাইওয়ে দিয়ে তীর বেগে।

জুলাই ২৯, ২০১৮। রোববার।

Saturday, July 21, 2018

ভয়

গ্রামের ছোট্ট পরিসর থেকে উঠে আসা রবীন বাবু পড়াশুনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন। কিন্তু কলেজে পড়ার সময় থেকে জড়িয়ে পরলেন ছাত্র রাজনীতিতে। লেখাপড়া গেল চুলোয়। অভাবের সংসারে নিত্য অশান্তি লেগেই থাকত। কিন্তু রবীনের মাথায় তখন দিন বদলের নেশা।

অসম্ভব ভাল বাগ্মী ছিলেন। যে কোন সভা সমিতিতে রবীন বাবুর বক্তৃতা শোনার জন্য লোক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন। যেমন ভঙ্গিমা তেমন গলার স্বর। সাথে প্রতিটি ঘটনার সাল তারিখের নিখুঁত বর্ণনা। মোহাবিষ্ট হয়ে শুনতেন সবাই।

নেতা থেকে মন্ত্রী হতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি স্বাভাবিক কারনেই। জনপ্রিয়তাও যথেষ্ট। কাজের লোকও বটে।

ইদানীং ব্যস্ত তিনি আগত সমাবেশ নিয়ে। বছরের এই সময়টা রবীন বাবুদের নাওয়া খাওয়ার সময় থাকে না। সাংগঠনিক কাজকর্ম সামলানো থেকে বক্তব্য পেশ করা। ঝক্কি অনেক।

কিন্তু কয়েকদিন যাবত একটা অদ্ভুত সমস্যা অনুভব করছেন রবীন বাবু। ডাকসাইটে নেতা তিনি। কিন্তু বেশি ভিড় সহ্য করতে পারছেন না। কথার খেই হারিয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই।
এদিকে সমাবেশের সময় এগিয়ে আসছে। চারদিকে পোস্টারে ছয়লাপ। মুখ্য বক্তা হিসাবে রবীন বাবুর নাম।

দেখতে দেখতে সমাবেশের দিন এসে গেলো। গ্রামগঞ্জ, শহরতলী থেকে কাতারে কাতারে লোক উপস্থিত হয়েছে সমাবেশে।

সবাই শ্লোগান দিচ্ছে। গান বাজছে। একটা উৎসবময় আবহ। সঞ্চালক ঘোষনা করলেন এবার মুখ্য বক্তার বক্তৃতার পালা। হাততালিতে ফেটে পড়ছে চারদিক। রবীন বাবুর হাতে মাইক্রোফোন তুলে দিলেন সঞ্চালক।

দরদর করে ঘাম বইছে রবীনবাবুর শরীর থেকে। কিচ্ছু শব্দ মনে আসছে না তার। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন দিগন্তব্যাপী জনসমুদ্রের দিকে। শ্লোগান উঠছে মুহুর্মুহু। সময় এগিয়ে চলেছে। কিন্তু একটা শব্দও এখনো উচ্চারিত হয়নি রবীন বাবুর মুখ থেকে। একটা অস্ফুট গোঙানি বেরিয়ে আসছে তার মুখ থেকে। গলা শুকিয়ে কাঠ। মাইক্রোফোনটা ছুড়ে ফেলে পালাতে চাইলেন মঞ্চ  থেকে। শ্লোগান পালটে পরিনত হল চিৎকার। রবীন বাবু পালাতে গিয়ে সজোরে পড়লেন মঞ্চের উপর থেকে।

স্ত্রী জয়ার ডাকে ঘুম ভাঙল। ঢকঢক করে বেশ কিছুটা জল খেলেন। ক্যালেন্ডারে চোখ গেল। এখনো চারদিন বাকি সমাবেশের। সকাল হতেই ছুটলেন ডাক্তারের কাছে। সব শুনে ডাক্তারবাবু বললেন গ্লসোফবিয়ায় সম্পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন বেশ কিছু দিন। রবীনবাবু হতাশ হয়ে বসে রইলেন।


জুলাই ১৬, ২০১৮। সোমবার।

হেডলাইন

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সাইকেলে খবরের কাগজ বিলি করেই সংসার চালান বিশুদা। তারপর বেলা হলে টুকিটাকি কাজ ও লোকের ফাইফরমাশ খাটা।

অভাবের সংসারে আশার আলো মেয়ে বনানী। ছোট্ট থেকেই লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী মা মরা মেয়েটা। বাড়ির সব কাজ সামলে তারপর লেখাপড়া। ইস্কুলের দিদিমনিদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা।

গতকাল দুপুরের পর থেকে দম ফেলার সময় পাননি বিশুদা। সারা এলাকা এসে ভেঙে পড়েছিল ওনার ঝুপড়ি ঘরে। মিষ্টিমুখ ও সাংবাদিক দের আবদার মেটাতেই কোথা থেকে রাত হয়ে গেল। বনানীর উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার খবর টা বিশুদাকে দিয়েছিল পাড়ার লোকেরাই।

দুপুরে যখন রেজাল্ট বেরোনোর খবরটা এসে পৌছাল, তখন পাড়ায় হইহই কান্ড শুরু হয়ে গেল। টিভি চ্যানেলের ওবি ভ্যান, খবরেরকাগজ এর সাংবাদিক, এলাকার সাংসদ, বিধায়ক, পাড়ার নেতা, কেউ আসতে বাকি ছিল না। ঝুপড়ি ঘরে জায়গা হবে না বলে পাড়ার ক্লাবে সকলের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল।

অনেক রাত হয়ে গেল শুতে। বনানীও ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। ঝুপড়ির একফালি ঘর ফুল ও মিষ্টিতে ভরতি। দুটো মিষ্টি মুখে দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ল বাবা ও মেয়ে।

আজ ভোরবেলা স্টেশনে কাগজ নিতে এসে চমকে উঠল বিশুদা। সব কাগজের প্রথম পাতায় বড় বড় করে ছবি ছাপা বনানী ও পাশে লাজুক লাজুক মুখের বিশুদার। আজ ওনারাই খবরের হেডলাইন। স্টেশনে সকাল থেকেই সাজো সাজো রব। কেমন যেন স্বপ্নের মতন লাগছিল।

সময় নষ্ট না করে রোজকার মতন সাইকেলে কাগজগুলো গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়ল বিলি করার উদ্দেশ্যে। রাস্তায় সবাই অবাক চোখে দেখতে লাগলো এক গরবিত বাবার দৃপ্ত ও উজ্জল সাইকেলে পদচালনা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মা-বাবার হাত ধরে ইস্কুলে যাচ্ছে। সকলের চোখ টিভি চ্যানেলের কল্যানে ইতিমধ্যেই বিখ্যাত হয়ে যাওয়া বিশুদার দিকে। এলাকায় আজ খবরের কাগজের চাহিদা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক অনেক বেশি।

যত রকমের খবরের কাগজ আছে, সব একটা করে রাখলেন নিজেদের জন্য। এগুলো কোনোটাই আজ বিক্রীর জন্য নয়। কোনো খদ্দেরকে ফিরিয়ে দিতে মন চাইছিল না একেবারেই।

জুলাই ২১, ২০১৮। শনিবার।

Sunday, July 15, 2018

অপ্রাপ্তি

এক এক দিন এরকম হয়। দম ফেলার সময় পাওয়া যায় না। একটার পর একটা ডেড বডি আসতেই থাকে। আর সাথে শ্মশান যাত্রী ছেলে ছোকরার দল। তাও এখন সংখ্যা অনেক কমে গেছে কাচের গাড়ি আসার পরে। শহুরে লোকেদের লোকবলও এখন অনেক কম।

গরীব খেটে খাওয়া মানুষ মারা গেলে তবু অনেক লোক জন আসে। ময়নার চায়ের দোকানের বিক্রি বাটাও জমে যায় সেইসময়ে।

বয়স তো নেহাত কম হল না। গতবছর আধার কাডে নাম লেখানোর সময় আন্দাজেই বয়স বলেছিল ছত্রিশ।
ছোট থেকেই ডাকাবুকো স্বভাবের। মা কবে যে মরে ভুত হয়ে গেছে এখন আর মনে পড়ে না। বাবা রিক্সা চালাতো পাড়ায়। আর রাতে মদ খেয়ে বেশিরভাগ সময় রাস্তাতেই পড়ে থাকতো। ময়নার যখন বছর পনেরো বয়স, তখন ওর বাবাও পটল তুললো। বস্তির ঘরে একা ওই বয়সের মেয়ের থাকা যে কি ভয়ানক তা আর বলার নয়। লেখা পড়া তো আর শিখতে পারে নি, তাই গঙ্গার ধারে শ্মশানঘাটে চায়ের দোকান দিল। সেখানেও পাড়ার দাদারা দুবেলা এসে হুজ্জোতি করতো। সবই সয়ে গেছিল ময়নার।

বলরাম কে খুব ভাল লাগতো ওর। গ্রাম থেকে আসা ছেলে টা পাড়ার লেদ কারাখানায় কাজ করত। মাকে নিয়ে বস্তির একটা ভাড়া ঘরে থাকতো।

খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে। ঠিক ওর বিপরীত। ওর দোকানে মাঝে মাঝেই চা খেতে আসতো। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলতে পারে নি ভাল লাগার কথা।

বছর দুয়েক পর বলরাম এবং ওর মা চলে গেলো অন্য কোন জায়গায়।

কেবল টিভিতে মাঝে মাঝে সিনেমা দেখার সময় মনে পড়ে যায় বলরামের কথা। যত্ত সব পাগলামি। নিজের মনেই হাসে ময়না।

আজ সারাদিন প্রচুর ডেড বডি এসেছে। ময়নার চাও বিক্রি হয়েছে বেশ ভালই। এখন রাতও অনেক হল। এবার দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করতে হবে।

আবার একটা ডেড বডি আসছে। না ঝাঁপ যখন ফেলেই দিয়েছে আর খুলবে না ময়না এত রাতে। বস্তির ডেড বডি মনে হচ্ছে যেন। সাথে অনেক লোক। মনে হয় কোন অল্পবয়সী লোক মরেছে। খই উড়ছে বাতাসে। সচরাচর বস্তির লোকেরা যেরকম তারস্বরে হরিবোল বলে সেরকম বলছে না। শোকের ছায়া স্পষ্ট সকলের মধ্যে।

একটা বুড়ি হাপুস নয়নে কেঁদে চলেছে, তাকে সামলে রেখেছে কয়েক জন মিলে। বুড়ির একমাত্র অবলম্বন ছিল এই ছেলেটা। তিন দিনের জ্ব্ররেই চলে গেলো। সামনে আসতে লাইটপোস্টের আলোয় বলরামের বুড়ি মা কে চিনতে পারলো ময়না।

চুল্লি নিভতে নিভতে রাত একটা বেজে গেল। শেষ অবধি ময়না গঙ্গার ঘাটে বসেই কাটিয়ে দিল। শ্মশানযাত্রীরা সবাই চলে যাওয়ার পরেও অনেক রাত অবধি গঙ্গার ঘাটেই বসে রইল। অনেক রাতে ভেজা অস্থি তে জল ছিটিয়ে দুহাত তুলে প্রনাম করল ময়না। বুক চাপড়ে হাউহাউ করে কেঁদে ডাকাবুকো মেয়েটা।


সৌমিক মুখোপাধ্যায়।
৮ জুন, ২০১৮। শুক্রবার।

টেম্পল রান

স্মার্ট ফোন টা হাতে আসার পর থেকেই নিরুপম আচরন কেমন যেন বদলে যেতে লাগল। সদা আলাপী, মিশুকে স্বভাব টা পাল্টে যেতে লাগল দিনে দিনে।
এখন ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ এবং বিভিন্ন রকমের গেমস ডাউনলোড করে তাতেই মগ্ন হয়ে থাকে। বিশেষ করে অফিস যাওয়া ও আসার পথে বাসে বা ট্রেনে যেতে আসতে মোবাইলে গেমস খেলাটা একটা ওর নেশায় পরিনত হল।

মধ্য বয়স্ক নিরুপমের ইদানীং ব্লাড সুগার ধরা পরেছে। প্রেশারটাও স্বাভাবিকের থেকে বেশি। কায়িক পরিশ্রম একেবারেই হয় না বললেই চলে। সারাদিন অফিসের ডেস্কেই কেটে যায়।

কিছুদিন হল ওর স্মার্ট ফোনে  টেম্পল রান ও সাবওয়ে সার্ফার ডাউনলোড করেছে। সময় কাটানোর জন্য অবসর সময়ে এই গেমস গুলোই এখন ওর পছন্দের। আসক্তিও বাড়ছে দিনে দিনে।

সেদিন বাড়ি ফেরার পথে অন্যদিনের মত টেম্পলরান খেলছিল। সারাটাদিন বেশ ধকল গেছে অফিসে। গেমসে হাতটা এখন ওর ভালই চলে।খেলাটাতেও বেশ সড়গড় হয়ে উঠেছে।

স্কোর করছিল ভাল। দৈত্য টা তাড়া করছে, আর ও স্মার্ট ফোনের টাচ স্ক্রিনে আঙুল দিয়ে সুচারু ভাবে দৌড় করাচ্ছে। কখনো কখনো দৈত্যটা একেবারে ঘাড়ের ওপর এসে পড়ছে কিন্তু নিরুপমের আঙুল ওকে নিয়ে চলেছে সেফ জোনে।

ট্রেন টা আজ খুব ভোগাচ্ছে। এক একটা সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকছে অনেকক্ষণ ধরে। ওদিকে গেমস এর স্কোর বেড়ে চলেছে হু হু করে। ওর আগের হাই স্কোরটাও ছাপিয়ে গেল আজ। পুরো মনটাই এখন ডুবে টেম্পলরানে। দৌড় দৌড় দৌড়। বেদম হওয়া মানা।

নিরুপমের পা টা কেমন যেন ভারি হয়ে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। দৈত্য টা যেন ঘাড়ের ওপর শ্বাস ফেলছে। আঙুল সরতে চাইছে না টাচ স্ক্রিনে।
নিরুপম দৌড়চ্ছে প্রানের ভয়ে। টাচ স্ক্রিনের উপর তার আঙুল এখন আর কোন কাজেই আসছে না। দৈত্যটার থাবা এখন ওর মাথার ওপর এসে পড়েছে।

অনেকক্ষন পড় সিগনাল পেয়ে ট্রেনটা ছাড়ল। ভোঁ এর আওয়াজে নিরুপমের তন্দ্রা ভাঙল। নিশ্বাসের গতি স্বাভাবিক হতে চাইছিল না কিছুতেই। আশে পাশের সহযাত্রী রা অনেকটাই সাহায্য করল স্বাভাবিক হতে। কিন্তু অস্বস্তিটা কাটছে না। অব্যক্ত একটা ভয়ে বাড়ি ফিরে টেম্পলরান  এবং সাবওয়ে সার্ফার গেমস দুটো আনইন্সটল করে দিল নিরুপম।


সৌমিক মুখোপাধ্যায়
১৮ মে, ২০১৮। শুক্রবার।

ছেলেবেলার রথের মেলা ও ঝুলন যাত্রা

গতকাল অনেক বছর পর রথের মেলায় গেলাম। বারেবারে মনে পড়ছিল আমাদের ছেলেবেলার দিন গুলোর কথা। মনে হচ্ছিল যেন এই তো সেদিনের কথা।

আমদের ছেলেবেলার রথের মেলা মানেই ছিল পাপড় ভাজা, জিলিপি, আলুর চপ এবং অবশ্যই মাটির পুতুল কেনা। হরেক রকমের পুতুল - মাছউলি, ঝুড়ি মাথায় বউ, বাঁক কাঁধে মিস্ত্রী, সৈনিক, ট্রাফিক পুলিশ, রাধামাধব, একছাচের জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা এবং আরও কত্ত রকম। এই সবই কিনতাম আমরা ঝুলন সাজাবো বলে। এখনকার দিনের পুতুলের মত ফিনিশ ছিল না হয়ত, কিন্তু সেগুলো বানানো হত পরম যত্নে এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই।

কিছু পুতুল আসতো ঘুরনি থেকে। অসম্ভব সুন্দর। তাদের মধ্যে ঘাড় নাড়া বুড়োবুড়ি খুব বিখ্যাত ছিল। সব বাড়িতেই খুজলে একটা না একটা পাওয়া যেত। আর বিক্রি হত বিভিন্ন মহাপুরুষ দের পুতুল। তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় ছিলেন নেতাজী। তার পরে রবিঠাকুর, বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ এনাদের পুতুল। এখন মেলায় এসব আর দেখা যায় না খুব একটা। এখন সব চাইনিজ পুতুলের রমরমা। ব্যাটারি চালিত।

আমাদের ছেলেবেলায়, রথের দড়ি টানার থেকে পুতুল কেনার আগ্রহ ছিল ঢের বেশি। কারন একটাই ঝুলন।

ঝুলনের আগে থেকে কাঠের গুড়ো জোগার করা, তাতে বিভিন্ন রং করা, কোনোটা সবুজ (মাঠের রঙ) , কোনোটা কালো (রাস্তার জন্য)। বালিও আনা হত রাস্তা বানানোর জন্য।

জোগাড় করা হত পুরানো কাপড়, ভাঙা ঈট পাহাড় বানানোর জন্য। পুরানো কাপড়ে মাটি লেপে ঈটের উপর চাপিয়ে পাহাড় বানানো হত। তার ফাঁকেফাঁকে লাগানো হত কামিনি গাছের ডাল পালা। আর তার ফাঁকে লুকিয়ে থাকতো প্লাস্টিক এর সৈনিক। সকলের হাতেই থাকত আগ্নেয়াস্ত্র। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বা শুয়ে।

পাহাড়ের সামনে বানানো হত গ্রাম, খেলার মাঠ, ইস্কুল, রাস্তা, হাসপাতাল। গ্রামের মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ। আর গ্রামের এক কোনে গাছের নিচে স্থান হত রাধামাধবের। সব পরিকল্পনাটাই নির্ভর করত কার কাছে কেমন ধরনের পুতুল আছে তার ওপর আর নিজের নিজের সাজানোর দক্ষতার উপর।

বাড়ির বড়রা এই ঝুলন সাজানোতে খুব একটা সাহায্য করতেন না কখনো। যা সাজানো হত, সবটাই সাজাতাম আমরা নিজেরাই। শুধু রাতে যাতে সুন্দর লাগে দেখতে, তারজন্য আলোর ব্যবস্থা করে দিতেন বাড়ির বড়রা ছোট ছোট টুনি বালব দিয়ে।

এখন কাউকে আর দেখিনা ঝুলন সাজাতে। পুতুল কেনা তো অনেক দুরের কথা। আমার মনে হয় বিষয়টা কিন্তু দারুন ছিল। এখনকার ছোটরা মানসিকতায় অনেক অনেক বড় আমদের থেকে। তারা মাঠে না গিয়ে মোবাইলেই গেমস খেলে। আমরা নিত্য খেলাধুলো করা সত্যেও অনেক বড় বয়স অব্ধি জানতাম না ক্রিকেট, ফুটবলের বিভিন্ন পজিশন গুলোর নাম। এখনকার ছোটরা সব জানে।

বড্ড তাড়াতাড়ি পালটে গেলো সময়টা। পাল্টালাম আমরাও। চেষ্টা করে গেলাম আপ্রান পাল্টাতে। পারষ্পরিক সম্পর্ক এর গ্যাপ বাড়তে লাগল। আর আমরা জেনারেশন গ্যাপ কমাতে ছূটলাম। ঝুলন বিদায় নিল। বিদায় নিল মাটির পুতুল।

বিদায় নিল অনেক কিছু।
কোনটা পরে, কোনটা আগে।                             বয়স হচ্ছে বলেই বোধহয়।     
মাঝে মাঝে একলা লাগে।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়

জুলাই ১৫, ২০১৮। রোববার।

Thursday, May 17, 2018

ভোর রাতের ছায়াছবি

ভোরের দিকেই ছায়াছবির মত ফুটে উঠত দৃশ্য গুলো। দৃশ্য না বলে ঘটনা বলাই মনে হয় ভাল। তখন দিবাকর ক্লাস নাইনে পড়ে। পরের দিন ইন্ডিয়া শ্রীলংকা ওয়ানডে। ফাইনাল ম্যাচ। ভোর রাতে দিবাকর দেখল সৌরভ এক রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করল। কিন্ত ইন্ডিয়া ম্যাচ জিতল। ঠিক সেটাই ঘটল পরের দিন ম্যাচে।

কিছুদিন পর দেখল দুর্গা পুজোর সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী জল থইথই। ঠিক সেটাই ঘটল সেবছর পুজোর দিন গুলোতে।

ঘটনা গুলো এলোমেলো ভাবে আসতো ভোর রাতেই। প্রথম দিকে তেমন পাত্তা দিত না। কিন্ত এই ভোর রাতের ছায়াছবি দেখাটা দিবাকরের অভ্যাসে পরিনত হল।

ওর নিজের যাতে সুবিধা হয় তেমন কিছু ঘটনা আগে থেকে দেখতে পেলে বরং ভালই হত। কিন্ত তা কখনই হয় নি। কতবার পরীক্ষার আগের রাতে শোবার সময় ভেবেছে যদি প্রশ্ন গুলো সামনে ধরা দেয়। না তা কোনোদিনও হয় নি।

লেখাপড়ায় অতি সাধারন ছাত্র। কোন মতে টেনেটুনে গ্রাজুয়েশনটা পাশ করল। তারপর সেলসের চাকরি জোটালো একটা কোম্পানিতে।

ভোররাতের এই ছায়াছবির কথা কখনো কাউকে বলে নি দিবাকর। কারন বললেও কেউ বিশ্বাসই করবে না এসব। আজগুবি বলে হেসে উড়িয়ে দেবে।

সেই যেদিন ফ্লাইওভার ভেংগে পড়ল, তার কিছুদিন আগেই দিবাকর দেখে ফেলেছিল সেই দৃশ্য। আফসোস হয় মাঝে মাঝে, যদি আগে থেকে সকলকে সাবধান করে দেওয়া যেতো।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের জয়, আয়লা ঝড়ের তাণ্ডবলীলা, পশ্চিমবঙ্গ এর রাজনৈতিক পালাবদলের ছবি দেখে ফেলেছিল ঘটনা ঘটার আগেই।

সংকোচে কাউকে কখনো বলতে পারে নি সারাজীবন অন্তর্মুখী স্বভাবের দিবাকর। আনন্দের ঘটনা দেখলে যেমন মজা পেত, তেমনি, দুঃখের কিছু ঘটনা ঘটতে দেখলে মন টা খুব ভারী হয় যেত। ভীষন অস্বস্তি হত। ভয়ানক কিছু দেখলে আর ঘুমাতে পারতো না। ভোর রাতে বিছানা ছেড়ে ঘরে পায়চারি করত।

সেদিন বিকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃস্টি হচ্ছিল। তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়লো। ঘুম নেমে এল সহজেই।

শবযাত্রা চলেছে। হরিধ্বনি ভেসে আসছে। খই উড়ছে বাতাসে। উগ্র ধুপের গন্ধ ভেসে আসছে নাকে। পাড়ার লোকেরাই কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে চলেছে মড়াটাকে। পাড়ার কেউ মারা গেল নাকি? কৌতুহলে চোখ গেল মড়ার দিকে। ছোট খাটো ক্ষয়াটে চেহাড়া। চোখে তুলসীপাতা, নাকে তুলো, গলায় রজনীগন্ধার মালা। দিবাকর নিজের মুখটা দেখে ধড়মড়িয়ে উঠে বসল বিছানাতে। সারা শরীর ভিজে গেছে ঘামে।

সেই ভোরের ছায়াছবির পর আর কিছু কখনো দেখেনি দিবাকর।

সৌমিক মুখোপাধ্যায়
১৬ মে, ২০১৮। বুধবার।

নবনীড়

নবনীড়ে এসে একাকিত্বটা একদম চলে গেল বন্দনা দেবীর। স্বামীকে হারিয়ে ছিলেন বছর দশেক আগেই। এখানে এসে সমবয়সী কত জন একসাথে থাকা, আড্ডা, হইচই করে দিন কাটানো।

তিন বছর হল, ছেলে জয়দীপ রেখে গেছে এখানে। প্রথম প্রথম কয়েক মাস খবর নিতো। তারপর থেকে আর নেয় না। প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেয় আর তার নিজের পেনশনের টাকাটা তো আছেই।

আসলে জয়দীপ তো খুব ব্যস্ত, অফিসে কাজের অনেক চাপ। তার ওপর নিজের সংসার। সেখানে বন্দনা দেবীকে দেখার সময় কই?

বন্দনা দেবীও নবনীড়ে বেশ ভালই আছেন। অন্তত আগের থেকে। প্রথম প্রথম খুব মন খারাপ লাগতো। সারাটাদিন মনমরা হয়ে থাকতেন। তারপর সবই সয়ে গেল।

হাতের কাজ খুব ভালই ছিল। ইস্কুলে হাতের কাজের শিক্ষিকা ছিলেন। এখানে অবসর সময়ে সেগুলোই শেখাতে শুরু করলেন ঘর সংসার হীন, অনাথ, স্বামী পরিত্বক্তা মেয়ে গুলোকে। ওরা বন্দনা দেবী কে মা বলে ডাকে। পরম যত্নআত্মি করে। উনিও ওদের বিপদে আপদে যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেস্টা করেন। অনুপ্রানিত করেন সকলকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। সাবলম্বী হতে।

এই সত্তর বছর বয়সে এখন প্রতিটাদিন নতুন করে বাঁচার রসদ খুঁজে পান বন্দনা দেবী। পয়লা বৈশাখ, রবীন্দ্র জয়ন্তী, দোল যাত্রা, রথ যাত্রা, দুর্গাপূজা, বড়দিন সব কিছু তেই আনন্দটা চুটিয়ে উপভোগ করেন।

আপন সন্তানের মা ডাক বহুদিন না শোনার আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেয় এই অনাথ, অনাত্মীয় মেয়ে গুলো। গতকাল মাদারস ডে তে ওরা আনন্দে মাতিয়ে রাখল সারাটাদিন।

গতকাল সারাদিন মোবাইল দেখার সময় পান নি বন্দনা দেবী। রাতে শোবার সময় মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলেন। না কোন মিসড কল দেখতে পেলেন না।


সৌমিক মুখোপাধ্যায়
১৪ মে, ২০১৮। সোমবার।

Monday, May 7, 2018

ইন্দ্রজাল

ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় এক সন্ধ্যায় পরিমল বাবা মায়ের হাত ধরে মহাজাতি সদনে গেছিল পি সি সরকার জুনিয়ারের ম্যাজিক শো দেখতে। ওই সন্ধ্যেটা পরিমলের জীবন টাই পালটে দিল। তার সব ধ্যান গিয়ে পড়ল ম্যাজিক এর দিকে। দিন রাত নাওয়া খাওয়া ভুলে ম্যাজিক নিয়ে পড়ে রইল পরিমল। লেখাপড়া চুলোয় গেলো। আর ইস্কুল থেকে বিতাড়িত হল বছর তিনেকের মধ্যেই।

বাবা একটা ছোট বেসরকারি অফিসে কাজ করতেন। মা সংসার সামলাতেন। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে নিত্য অশান্তি লেগেই ছিল। একমাত্র ছেলে পরিমল ম্যাজিক নিয়ে থাকলে ভবিষ্যতে পেট চলবে কি করে?

কিন্তু পরিমলের ম্যাজিকের হাত টা ভালই ছিল। যখন বছর কুড়ি বয়স, তখন থেকেই ছোট ছোট ইস্কুল থেকে ডাক পেতে লাগল ম্যাজিক শোয়ের।

কচিকাঁচা গুলোকে আনন্দ দিতে পারলে সমস্ত দুখ কস্ট ভুলে যেত। যেটুকু টাকা পেত, তা দিয়ে নতুন নতুন ম্যাজিকের সরঞ্জাম কিনতো।

এমনি করেই ইন্দ্রজাল পরিমলের জীবনে ক্রমশ জাল বিস্তার করতে লাগল।

মাস তিনেক আগে একটা বাচ্ছাদের ইস্কুলে ভ্যানিশের খেলাটা দেখানোর পর অনেক গুলো সরঞ্জাম খুজে পাচ্ছিল না। পয়সার লোভ নেই ঠিকই, কিন্তু কস্ট করে পয়সা জমিয়ে কেনা ম্যাজিকের সরঞ্জাম খোয়া গেলে কারই বা ভাল লাগে?

ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল পরের দুটো শোতেও। এবার এক সাথে চার খানা পায়রা উড়ে চলে গেল। কিছু যে একটা অতিপ্রাকৃত ঘটছে, তা পরিমল বুঝতে পারল।

আজ দুপুর বেলা ওর ম্যাজিক শো ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সেরিব্রাল পালসির ছোট্ট ছোট্ট স্পেশাল শিশুদের মাঝে। ফুলের মত শিশুগুলোকে দেখে পরিমলের বুকের ভিতর টা কেমন যেন মোচড় মারছিল।

গ্রিনরুমে গিয়ে ম্যাজিকের ড্রেসটা গায়ে চাপাতেই এক ঐশ্বরিক শক্তি ভর করল পরিমলের ভিতর।

স্টেজে উঠল। শিশু গুলোর কলকলানি শুনতে পাচ্ছে। টিচার রা আপ্রান চেস্টা করছেন ওদের শান্ত করে রাখতে।

ম্যাজিক স্টিক টা হাতে নিয়ে, বিশেষ ভংগিমায় ঘোরাতেই গোটা হল শান্ত হয়ে গেল। একটা আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে না। পাখার আওয়াজটাও প্রকট এখন। দেখল একে একে সবাই অচৈতন্য হয়ে পড়ছে।

পরিমল ভীষন ভয় পেয়ে গেল। কিছু কি ভুল হল? দরদর করে ঘামতে লাগলো। তার ম্যাজিকের পোশাক ভিজে গেলো।

কিছু সময় পরে পরিমল দেখল ছোট্ট ছোট্ট ফুটফুটে ছেলে মেয়ে গুলির ঘুম ভাংছে। একটা অদ্ভুত আবেশ জড়িয়ে রয়েছে তাদের চোখে মুখে। তারা হাসছে, খেলছে আর পাঁচটা স্বাভাবিক শিশুর মতন। তাদের অভিভাবকেরাও উচ্ছসিত। করতালিতে ফেটে পড়ছে গোটা হল। আজ স্বয়ং পরমেশ্বর ভর করেছিলেন পরিমলের ইন্দ্রজালের খেলায়।

আজ পরিমলের ইন্দ্রজাল স্বার্থক।


সৌমিক মুখোপাধ্যায়

৭ মে, ২০১৮, সোমবার।

Friday, May 4, 2018

আনন্দ আশ্রম

বছরের এই সময়টাতে যে যেখানেই থাকুক না কেন, সবাই এসে উপস্থিত হয় পরিযায়ী পাখির মত শুধু মাত্র আমাদের বন্ধুত্বের টানে।

শীতের আমেজ গায়ে মেখে একটা দিন শুধুমাত্র ইস্কুলের বন্ধুদের সংগে কাটানো, গল্প, গান, আড্ডা এবং ছেলেবেলার দিন গুলোর স্মৃতি রোমন্থন। জীবনের দশ বারোটা বছর যারা কাটিয়েছিলাম এক সাথে।

'হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি
গেলেম কে কোথায়
আবার দেখা যদি হল সখা
প্রানের মাঝে আয়'

মফস্বলের ইস্কুল আরিয়াদহ কালাচাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ছোট্ট থেকে আমাদের বেড়ে ওঠা, মাধ্যমিক দেওয়া। অসাধারন সব মাস্টারমশাই দের সান্নিধ্য লাভ। এরপর কেউ বিজ্ঞান বিভাগে, কেউ বানিজ্য বিভাগে আবার কেউ বা কলা বিভাগে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রান্তে। উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে কারো বা পাড়ি দেওয়া দূর রাজ্যে। এরপর জীবিকার্জনের জন্য সংগ্রাম।

এখন সকলেই চল্লিশ প্লাস।
কারো চোখে চালশে, কারো আবার উচ্চ রক্তচাপ, আবার কারো ডায়াবেটিস।

আগে যাকে দেখা যেত বাবড়ি চুলে, তার এখন মাথা জোড়া টাক। ভীষন ডানপিটে বিচ্ছু এখন শান্ত স্নিগ্ধ। আবার ভাল মানুষ সাত চড়ে রা না কাটা সুবোধ বালকটির এখন প্রখর বাগ্মীতা। কিচ্ছুটি মেলে না শুধু মাত্র মনটা ছাড়া।

বাঙালি তো তাই রাজনীতি, খেলাধুলা, সাহিত্য, সংগীত এই নিয়ে আড্ডায় সময় চলে যায় নিমেষের মধ্যে। মতের অমিল পাত্তা পায় না মনের মিলের কাছে।

এবছর, প্রস্তাব টা রেখেছিল অনিকেত।
একটু অন্য রকম ভাবে বাষিক আনন্দ টা উপভোগ করলে কেমন হয়?
যদি আনন্দ টাকে কয়েকগুন বাড়ানো যায়?
যদি আনন্দ টাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের মধ্যে?
এক দিনের জন্যও যদি হাসি ফোটে অবহেলিত শিশুদের মুখে?

সবাই এক কথায় মেনে নিল। ইস্কুলের বন্ধুদের হোয়াটস্যাপ এর গ্রুপে আলোচনা শুরু হল। একে বাস্তবায়িত করতেই হবে। আমাদের ক্যাপ্টেন অসিত, স্বাগত, সুমিত এরা ঝাঁপিয়ে পড়ল সকলের সম্মতি পেয়ে।

যোগাযোগ করা হল, সল্টলেকের প্রবর্তক মনোবিকাশ কেন্দ্রের সাথে। শিশু, কিশোর, যুবক, প্রৌঢ় মিলিয়ে ওদের সংখ্যা প্রায় জনা তিরিশ। সংঘের আর্থিক টানাটানি প্রবল। দু তিন জন জনদরদী মানুষ ও সাথে কয়েক জন কলেজ পড়ুয়ার স্বেচ্ছাশ্রমে চলে সংস্থাটি। কোন মতে বিভিন্ন লোকের অনুদানে চলা সংগঠনটিতে ওষুধপাতি ও নিত্যদিনের খরচ যেন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা।

কথা হয়ে ছিল আগেই। সকাল থেকে প্রস্তুতি। শুধু পৌছানোর অপেক্ষা।

মনোবিকাশ কেন্দ্রে সকাল থেকেই আজ সাজো সাজো রব।
সকাল সকাল স্নান সেরে সবাই রেডি। ওদের অভ্যর্থনায় আমরা অভিভুত হয়ে গেলাম। আমাদের জন্য ওদের উপহার ছিল নিজেদের হাতে তৈরি ছোট ছোট সামগ্রী।

আমরাও ওদের সকলের জন্য নিয়ে গেছিলাম বই, রঙ পেন্সিল, খাতা, জামা কাপড়, চকোলেট, সাবান ও আরো কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। উপহার পেয়ে কখনো এত খুশি হতে কাউকে আমরা দেখি নি।

সকালের ব্রেকফাস্ট শেষ হতেই শুরু হল ওদের গান ও কবিতার আসর। কি সাবলীল। সকলেই আনন্দে উচ্ছসিত।

দুপুর বেলার খাবার আমরা নিজেরাই পরিবেশন করলাম। ওরা যত না খেল, আমোদিত হল ঢের বেশি। আমরা সকলে তখন এক পরিবার।

খাওয়ার পরে, বছর আঠারোর নিতাই তখন গলা ছেড়ে দুহাত প্রসারিত করে মনের আনন্দে গাইছে

"প্রান ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে
মোরে আরো আরো আরো
দাও প্রান...."

আমাদের সবার চোখে তখন জল

বাড়ি ফিরে যেতে মন চাইছিল না বিকাল বেলা। তবু সংসারী মানুষ আমরা, বিভিন্ন দায়ে আবদ্ধ, ফিরে এলাম মনোবিকাশ কেন্দ্র থেকে, শিঘ্রই ফিরে আসব ওদের মাঝে এই প্রত্যাশা নিয়ে।



সৌমিক মুখোপাধ্যায়
৪ মে, ২০১৮। শুক্রবার।

Monday, April 30, 2018

বন্ধন

একমাত্র পুত্র অনিকের কাণ্ডকারখানা দেখে কল্যাণী ফিক করে হেসে ফেলল।

ভাল মুখোরচক চানাচুর, ডালমুট, এক প্যাকেট পপিন্স, দামি শাড়ি, সুন্দর থ্রিফোল্ড ছাতা, শৌখিন চটি আরও কত কিছু সব কল্যাণীর জন্য থরে থরে সাজিয়ে রাখছে অনিক। ওর স্ত্রী রিতাও খুব মনোযোগ সহকারে অনিক কে সাহায্য করছে। খুব মজা লাগছিল। ছোট্ট রিক দূরে মহানির্বাণ মঠের মাঠে খেলা করছে। আত্মীয়স্বজনরাও ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে।

কিন্তু একি ! অনিক কি কাচা কলা সেদ্ধ খাওয়াবে না কি সিদ্ধ আতপ চালের সাথে আমাকে? সাথে আবার সিদ্ধ মাছ? ছ্যাঃ, এসব তো কল্যানী খেতে পছন্দ করে না। কস্ট পেল খুব।

আয়োজন ভালই করেছে অনিক। রান্নার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।  মায়ের পছন্দ অনুযায়ী। এচোড়ের গুলি কাবাব, ছানার ডালনা, সাথে আনারসের চাটনি আর শেষ পাতে বাটারস্কচ আইসক্রিম। কিছুই এখন আর খাওয়া হবে না কল্যানীর।

আসলে শেষ দিকটায়য় শরীর ভাঙতে শুরু করেছিল কল্যাণীর। খাওয়াদাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এল। খেতে খুবই ভাল বাসতো আগে। এখন নিত্যদিন নিত্যনতুন সমস্যা। ডাক্তার ভাজাভুজি, মিস্টি সব খাওয়া নিষেধ করে দিয়েছিল। তাই জীবনের প্রতি টান ক্রমশ চলে যাচ্ছিল। অথচ, অনিক ও রিতা যত্নেই রেখেছিল কল্যানীকে। উপরি পাওনা রিক সোনা।

দশদিন আগে ভোর রাতে কল্যাণী বুকে অসহ্য ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো। সাথে নিশ্বাস নিতে কস্ট। আধঘণ্টা খুবই কস্ট পেল। ভোর বেলা অনিক ও রিতা যখন তাকে এম্বুলেন্স এ তুলল তখন দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে। তারপর আর কিছুই মনে নেই কল্যানীর।

কেউ একজন, রিককে দুটো ডেয়ারি মিল্ক আর দুটো আংকেল চিপ্স এর প্যাকেট দিয়েছিল। ওর গল্প বলার ও খেলার সাথীর জন্য একটা করে প্যাকেট  রেখে এলো ঠাম্মির সুন্দর করে সাজানো ছবিটার সামনে। দুটোই যে কল্যাণীর খুব পছন্দের সেটা আর কেউ না জানুক রিক জানে।

বড় মায়ার এ সংসার। ছেড়ে যেতে মন চায়না একেবারেই। কিন্তু এবার যে তাকে যেতেই হবে সব বন্ধন ছিন্ন করে।

অনিক কাজে বসল। মঠে গীতা পাঠে ভেসে আসতে লাগল :

বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরাণি । তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী ।। "


সৌমিক মুখোপাধ্যায়
২৯ এপ্রিল ২০১৮, রোববার।

পাগলি তোর জন্য

অসংখ্য মানুষের যাতায়াত এই পথ দিয়ে। কিন্তু কেউ ফিরেও তাকায় না বিশুর দিকে। বয়স প্রায় চল্লিশ। অবিন্যস্ত চুলে উকুনের পরিপাটি সংসার। আর চোখের কোলে পিচুটি। কত বছরের স্নান না করা শরীরে কালো কালো ছোপ। আস্তাকুড় থেকে যা পায় তাই কুড়িয়ে খেয়ে কাটিয়ে দেয়। কদম গাছ টার নিচেই বসে থাকে প্রায় সারাটাদিন।

দিন কয়েক হল, একটা অল্প বয়সি মেয়েও এসে জুটেছে এলাকায়। কতই বা বয়স হবে, পনেরো কি ষোল। চালচুলো হীন। কোথা থেকে যে এসে জুটেছে কে জানে? আস্তাকুড়ের পাশেই ঘুরঘুর করে, কিছু খাবার পাওয়ার আশায়। বিশু দেখলেই তেড়ে যায়, দাঁত খিচিয়ে ওঠে আর বিড়বিড় করে গালি দেয় পাগলিটাকে। ওর খাবারে যাতে ভাগ না বসাতে পারে সেই জন্য।

পাড়ার বয়স্ক মহিলারা মাঝে মাঝেই পুরানো জামা কাপড় দেয় মেয়েটিকে, কিন্তু ও গায়ে কিছু রাখতে চায় না। ওর লাজ লজ্জার বালাই নেই।

রাত বাড়লেই কিছু বখাটে ছেলে এসে ইদানিং আড্ডা বসায় ওই চত্তরে। খুব বেশি লোকজন রাতে এইদিকটাতে আসে না। সবাই সব জানে বোঝে কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। সব দেখেও না দেখার ভান করে সবাই। অকথ্য গালি গালাজে সরগরম হয়ে ওঠে কদমতলার আশপাশ। বিশু পাগলা রোজই রাতে শুয়ে শুয়ে দেখে তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে।

সেদিন রাতে কিছুই খাওয়া জুটলো না বিশুর। আজ আর কোন গেরস্ত কিছু উচ্ছিষ্ট ফেলে যায়নি পাড়ার আস্তাকুড়ে। টিউবওয়েল থেকে জল খেয়েই শুয়ে ছিল। পাগলি টাও গিয়ে কিছুক্ষন খাবার খুজলো। কিন্তু কিছু না পেয়ে বসে রইল।
এক এক দিন এরকম যায়।

গোটা তিনেক বাইকের আওয়াজ এগিয়ে আসছে এদিকেই রোজকার মতন। বখাটে গুলো  বাইক থেকে নামল আর হইচই করতে লাগলো। পাগলি টাকে দেখে ওরা একটা প্যাকেট থেকে কিছু খাবার ছুড়ে দিল। আর বিশ্রী ভাবে হাসাহাসি করতে লাগল। খাবারটা পেয়ে হামলে পড়ে খেতে লাগল পাগলিটা।

পেটের সাথে সাথে এখন গাও জ্বলতে লাগলো বিশুর। হঠাত দেখলো নীল জামা পড়া একটা ছেলে পাগলি টার হাত ধরে টানছে বিশ্রী ভাবে। অদ্ভুত আওয়াজ করে হাসতে লাগলো পাগলিটা। না কি পাগলিটার কান্নার আওয়াজ। বিশু এত কিছু বোঝে না। কিন্তু এটুকু বুঝলো সভ্যতার সীমা ছাড়াতে চলেছে।

একটা আস্ত ইট পড়েছিল কদমগাছের গোড়ায় । বিশু ওটাকে হাতে তুলে দৌড়ে গিয়ে সজোরে মারল ছেলেটার মাথায়। নিমেষে রক্তে লাল হয়ে গেল জায়গাটা। এত অকস্মাৎ ঘটে গেল ঘটনাটা যে কিছু বোঝার আগেই বাকি ছেলেগুলো বাইক নিয়ে পালাল জায়গা ছেড়ে। নীল জামা ছেলেটার নিথর শরীর টা পড়ে রইল ওখানেই।

ওদের ফেলে যাওয়া খাবারের একটা প্যাকেট পড়ে ছিল কাছেই। বিশু কুড়িয়ে নিয়ে গোগ্রাসে খেতে শুরু করল।  পেটের জ্বালার সাথে গায়ের জ্বালাটাও জুড়িয়েছে এখন। পাগলি টাও খাবার টা প্রায় শেষ করে ফেলেছে ইতিমধ্যে।

জল ভরা চোখে ফেলফেল করে পাগলিটা তাকিয়ে রইল তার আস্তাকুড়ের প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে।

বাইক গুলো আবার ফিরে আসছে। বাইকের আলো তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো। কতদিন পর পেটভরে আজ খেতে পেল বিশু পাগলা।

সৌমিক মুখোপাধ্যায়
২৬ এপ্রিল ২০১৮

অযান্ত্রিক

দেওয়াল ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই ধরমরিয়ে উঠে পড়লেন ব্রজেন বাবু। সকাল ৭ টা বেজে গেছে। ইস অনেক দেরি হয়ে গেল আজ। রাজ্য সরকারি কর্মচারী দের এখন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এই সময় টা মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময়।

কোনমতে বাজার দোকান করে, স্নানে ঢুকলেন। স্নান সেরে ঠাকুর ঘরে ঝড়ের গতিতে প্রনাম সারলেন। বৈশাখ মাস হলেও এখনো তেমন গরম পড়েনি। স্ত্রী মিত্রা কে বললেন খাবার দিতে। যতটা সম্ভব অল্প করে। দশটার মধ্যে বিডিও অফিসে পৌছাতেই হবে। এখন হাজিরার খুব কড়াকড়ি।

বাড়ি থেকে অফিস যেতে বাসে পাক্কা এক ঘন্টা সময় লাগে। স্টান্ড থেকেই ওঠেন বলে অফিস টাইমেও বসার জায়গা পেতে অসুবিধা হয় না। আজও বসার জায়গা পেলেন যথারীতি।

কিছুটা পথ যেতেই, বাস টা হঠাত ঝাঁকুনি দিতে লাগল। বেশ একটু ঘুম ঘুম আসছিল। দিল ঘুমটা চটকে। ডেলি প্যাসেঞ্জাররা ইতিমধ্যে হইচই শুরু করে দিয়েছে। মিনিট তিনেক পর বাস টা একদম দাঁড়িয়ে গেল। ড্রাইভার বলল বাস আর যাবে না।
অসন্তোষ বাড়তে লাগল যাত্রীদের ভিতর।

ব্রজেন বাবু অধৈর্য হয়ে উঠলেন। কন্ডাকটর কে গালিগালাজ দিতে দিতে বললেন স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি বেরোনোর সময় দেখে নিতে পারিস না? তাহলে এই রকম ভোগান্তি হয় না। কন্ডাক্টর ছেলেটা চ্যাঙড়া। এতক্ষন সব হজম করছিল। টিকিট এর পয়সা ফেরত দিচ্ছিল। আর থাকতে না পেরে বলল, আরে দাদা আপনিও তো বেড়িয়েছেন বাড়িথেকে। কোনো সিওরিটি আছে আপনি গন্তব্যে পৌছাবেন কি না?

আর কথা না বাড়িয়ে, বাস থেকে নেমে অন্য একটা ভিড় বাসে উঠলেন ব্রজেন বাবু। আজ টাইমের মধ্যে পৌছোতেই হবে। ঘাম হচ্ছে খুব। শরীর টা কেমন যেন অস্থির লাগছে। বমিভাব আসছে ভিড়ের মধ্যে। বুকের ভিতর একটা ভীষণ চাপ অনুভব করছেন। চ্যাঙড়া কন্ডাক্টর ছেলে টার কথা মনে এল, আপনি যে গন্তব্যে পৌছবেন তার কোনো সিওরিটি আছে?

কারা যেন চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিল। কানে ভেসে এল কারা যেন বলাবলি করছে, অসুস্থ শরীর নিয়ে কেন যে এই লোকগুলো বাড়ি থেকে বেরোয়?

ব্রজেন বাবুর মোবাইল ফোন থেকেই একটা অচেনা কণ্ঠস্বর মিত্রা কে দুঃসংবাদটা দিল। তখন বাজে সকাল সাড়ে দশটা।

সৌমিক মুখোপাধ্যায়
২৪ এপ্রিল ২০১৮

লোডশেডিং

আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাষ ছিলই।  দুপুর হতে না হতে আকাশ কালো করে এল।

সুমিত আজ আর দেরি না করে অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়ল বিকেল বিকেল। অন্যদিন বেশ কিছুটা সময় অফিসে থাকতে হয় কাজের চাপে। কিন্তু আজ যা ওয়েদার, তাতে বাড়ি ফিরতে বেশ চাপ আছে মনে হয়।

বাইরে বেড়িয়েই মনে পড়ল আজ তো ইন্ডিয়ার খেলা আছে টি টোয়েন্টি। যাক বাড়ি ফিরে জমিয়ে খেলা দেখা যাবে। বাড়িতে জয়িতা কে ফোন করে বলল আজ খিচুড়ি করতে আর সাথে ডিম ভাজা।

এদিকে যত সময় যাচ্ছে ওয়েদার অত্যন্ত খারাপ হচ্ছে। সুমিত একটা ওলা পেয়ে গেল সহজেই। কিছুটা নিশ্চিন্ত। তুমুল ঝড় শুরু হল। সাথে বাজ পড়া আর মুশলধারায় বৃষ্টি। প্রচন্ড দূর্যোগ।

সন্ধ্যা বেলার মধ্যেই বাড়ি ফিরে এল। কিন্তু চারদিকে জল থইথই করছে। লোডশেডিং হয়ে গেছে প্রায় এক ঘন্টা হতে চলল। এই অবস্থায় কখন যে  আলো আসবে কোন ঠিক নেই। মোবাইল ফোন এর চার্জ ও প্রায় শেষ।

বাড়িতে মা এই সময়টা রোজ বাংলা সিরিয়াল দেখে। লোডশেডিং এর ফলে আজ টিভি বন্ধ। জয়িতা ঘরকন্নার কাজ সামলায়। আর সামলায় বুবলাই কে। ওদের সাত বছরের সন্তান। সবাই ব্যস্ত। শুধু রাতে খাবার টেবিলেই যেটুকু কথা হয়। সবাই যে যার মত নিজের নিজের কক্ষে বাস করে আর পাঁচটা সুখী পরিবার এর মতন।

ঘরে হারিকেন এর পাট চুকেছে বহু বছর হল। এখন বাতিই ভরসা। আগে সন্ধ্যা নামলেই আলো চলে যেত। সেই সব দিন গুলো তে হারিকেন এর যত্ন একটা রোজকার কাজ ছিল সব বাড়িতেই। সলতে গুলো কাচি  দিয়ে সমান ভাবে কাটা, কাচ পরিস্কার করা ইত্যাদি। সেসব পাট উঠে গেছে বহুদিন হল।

পাড়ার দোকান থেকে গোটা চারেক বাতি এনে রাখল সুমিত।কে জানে কখন আলো আসবে? মনে পড়ল, ছোট বেলায় আলো চলে গেলে বলা হত জ্যোতি বাবু চলে গেলেন। আর আলো এলেই জ্যোতি বাবু আসতেন।

ধুত্তোর কিছুই ভাল লাগছে না। খেলা দেখা মাটি। মোবাইল ও সুইচ অফ। বাইরে বৃষ্টি ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

মায়ের ঘরে মা গুন গুন করে বানী জয়রাম এর একটা গান গাইছিল। মায়ের পাশে বসে সুমিতও গলা মেলাল কত্ত বছর পর। বুবলাই ও জয়িতাও চলে এল ঘরে। আজ পড়ার ছুটি। বুবলাইয়ের ছড়া, জয়িতার আবৃত্তি। মায়ের মুখে ভুতের গল্প। কতকিছু আনন্দ ফিরে এল আজ। কোথা দিয়ে যে সময় টা কেটে গেল নিমেষে। কত দিন পড় আজ সবাই একসাথে, একমনে গান, গল্প, প্রান খুলে আড্ডা। আর সব শেষে খিচুড়ি। সেই পুরোনো স্বাদ।

বাইরে দুর্যোগ টা কমেছে।
রাত এগারো টা নাগাদ আলো এল। সবাইকে চমকে দিয়ে হাততালি দিয়ে বুবলাই বলে উঠল জ্যোতি বাবু এসে গেছে, জ্যোতি বাবু এসে গেছে।

আচ্ছা, মাঝে মাঝে লোডশেডিং হয় না কেন??



সৌমিক মুখোপাধ্যায়
২২ এপ্রিল ২০১৮, রোববার

তুবড়ি

কালিপুজোর সময়টা এলেই রতন পাড়ার হিরো হয়ে ওঠে। নাহলে বছরের অন্য সময়ে কেউ তাকে পাত্তাও দেয়না। দেবেই বা কেনো?  ছেলেবেলায় বাবা কে হারিয়েছে। আর মা লোকের বাড়ি বাসন মেজে কোন মতে কষ্টে দিন গুজরান করেছেন। লেখাপড়া শেখার সু্যোগ কখনও হয়নি। 
বছর দশেক আগে মা'ও চলে গেছে দুদিন এর জ্ব্ররে ভুগে।

পাড়ার মোড়ের সাইকেল এর দোকানে হেল্পার এর কাজ করে দিন কাটে আর রাতে সস্তা মদের নেশা। তাই সকলে তাকে এড়িয়ে চলে।

কিন্তু রতনের হাতে তুবড়ি কথা বলে। দুগগা পুজো শেষ হবার সাথে সাথেই পাড়ার ভদ্র লোকেরা ওর আশে পাশে ঘুরঘুর করে। বাড়ির জন্য তুবড়ির বায়না নিয়ে। এইসময় রতনের খাতিরই আলাদা। সে কাউকে ফিরিয়ে দিতে চায় না। যতটা সম্ভব সকল কে খুশি করে। যা টাকা পায়, তা দিয়ে রাতের বেলা নেশা করে।
কেউ তো কিছু বলার নেই ওকে।

দে বাড়ির ছোট মেয়ে রুমা রতনেরই বয়সি। ছোট্ট থেকেই দেখছে তাকে। লক্ষী প্রতিমার মত মুখ। আর গুনে সরস্বতী। ওকে দেখলে রতন এর যে ঠিক কি রকম অনুভুতি হয় তা বলে বোঝানো অসম্ভব। কত দিন ভেবেছে যে সবাই তো আসে ওর কাছে তুবড়ির বায়না নিয়ে কিন্তু ওই বাড়ির কেউ আসে না কেন। সেরা তুবড়িটা তাহলে বানিয়ে দেখিয়ে দিত রুমা'কে।

রতন এর স্বপ্ন আর পুরন হয় না। বছর ছয়েক আগে রুমার বিয়ে হয় কলকাতার এক ডাক্তারবাবু'র সাথে। পাড়াশুদ্ধ লোক খেতে গেছিল দে বাড়িতে। রতন কেও নেমন্তন্ন করেছিল রুমার বাবা। পাড়ার সকলের মতন। কিন্তু রতন যায় নি, যেতে মন চায় নি। ওই দিন সকাল বেলা পাড়ার মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছিল রতন। কেন কে জানে? আর ওই রাতে নেশাও করেছিল খুব।

এইবছর নিজের চোখ কে রতন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। রুমা নিজে তুবড়ির বায়না নিয়ে এল রতনে'র কাছে। সাথে ওর ছোট্ট মেয়েটাকেও নিয়ে এসেছিল। যেমনি মা তেমনি মেয়ে। যেন পুতুল। এবছর আর তুবড়ির বেশি বরাত নিল না। সব মন প্রান দিয়ে তার স্বপ্ন পুরন করতে লাগল। এমন তুবড়ি বানাবো এবার, মুগ্ধ করে দেব রুমাকে।

কালিপুজোর দিন দুয়েক আগেই রুমাদের বাড়ি গিয়ে সব তুবড়ি পৌছে দিয়ে এল রতন।

এত আনন্দ জীবনে পায় নি সে। আজ ওর স্বপ্ন পুরনের দিন। ভাবতে লাগল যে ওর তুবড়ি জ্বালানোর পর রুমা'র মুখের প্রশান্তি র ছবি।

দুঃসংবাদ টা এসে আছড়ে পড়ল কালিপুজোর পরের দিন সক্কাল বেলা। খবর এল দে বাড়ি তে গতরাতে তুবড়ি ফেটে রুমা'র মুখ পুরো ঝলসে গেছে। কলকাতার এক নামী নার্সিংহোম এ ভরতি করা হয়েছে তাকে। নিতান্তই দুর্ঘটনা। কেউ একবার এর জন্য রতন কে দোষারোপও করে নি। কিন্তু এক অব্যক্ত যন্ত্রনা কূড়ে খেতে লাগল তাকে।
 
ভাইফোঁটা র দিন সকালে রতন এর ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ টা রেল লাইনের ধার থেকে সনাক্ত করল রেল পুলিস।



সৌমিক মুখোপাধ্যায়
২০।০৪।২০১৮

অভিভাবক

বেশ কয়েক বছর হল, এখন আর কচি কচি ডাল পালাগুলো আমার খুব একটা ধারে কাছে আসেনা। সেই যেদিন থেকে আমার পাতা গুলো হলুদ হতে শুরু করেছিল, ডাল গুলো শুকিয়ে আসছিল। নেহাত মানুষের মত ওরা দূরে সরিয়ে দিতে পারে না তো তাই গাছের একটা পরিত্বক্ত অংশ হিসেবেই দিন কেটে যাচ্ছিল আমার। আমিও মায়া ত্যাগ করছিলাম ধীরে ধীরে। 

গত কিছুদিন হল ছোট্ট চড়াই টা আমারই একটা ডালে বাসা তৈরি করেছিল ডিম পাড়বে বলে। আনন্দে মন ভরে উঠছিল আমার। বেশ আনন্দে ছিলাম এই কদিন। সখ্যতা গড়ে উঠেছিল চড়াইটার পরিবার এর সাথে। ওদের আর কি দোষ? ও তো আর জানে না যে যেখানে ও বাসা বাঁধছে তার মরন আগত প্রায়। কত সুখ দুখখের কথা হত আমাদের।

দিন সাতেক আগে চারটি ডিম পেড়েছিল মা চড়াই। ডিম তো নয়, যেন এক আকাশ মায়া। তারপর থেকেই ক্রমাগত তা দিয়ে বসে থাকা। মায়ের স্নেহ বলে কথা। তারপর ছানাদের ফুটে বেড়ানো। আমার পরিত্বক্ত ডালে নতুন জীবনের উৎসব।

কালকের নিষ্ঠুর কালবৈশাখী  ঝড়টা সব লণ্ডভণ্ড  করে দিল। আমারতো সময় হয়েই এসেছিল। দমকা হাওয়ায় আমি ভেঙে পড়লাম চড়াইয়ের বাসা টাকে সাথে নিয়ে। সাথে চার চারটি ফুটফুটে ছানা।

আমার শুকনো ডাল ও হলুদ হয়ে যাওয়া পাতা দিয়ে আঁকড়ে ছিলাম বাসাটাকে। কিছুতেই হার মানি নি। একটা ছানার গায়েও আচর লাগতে দিই নি। ঝড় থামার পর রাতের অন্ধকারে চারটি ছানাকে নিয়ে সারারাত বসে পাহারা দিল বাবা ও মা চড়াই। ভোরের আলো ফোটার সাথেই ওরা আশ্র‍য় নিল মিত্তির বাড়ির ঘুলঘুলিতে। ওদের নতুন বাসায়।

আজ যখন সকাল বেলা মিউনিসিপ্যালিটির লোকেরা আমার ডালপালা গুলো কূড়িয়ে নিয়ে গেলো, অনেক টা দূর অবধি ছোট্ট চড়াই টা গেল আমার সাথে। আমাকে শেষ বিদায় জানাতে। 

ভাল থাকিস রে বিচ্ছু গুলো। তোদের জন্য এক আকাশ ভালবাসা ও আদর রইল।


সৌমিক মুখোপাধ্যায়।
এপ্রিল ১৮, ২০১৮। বুধবার।

দুঃসময়

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? সন্ত্রাসে মরে সেনা মন্ত্রীরা করে হায় হায়। সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? মৃত সেনার ছবি খবরের পাতায় পাতায়। ...