Tuesday, June 4, 2019

দুঃসময়

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়?
সন্ত্রাসে মরে সেনা মন্ত্রীরা করে হায় হায়।

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়?
মৃত সেনার ছবি খবরের পাতায় পাতায়।

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়?
দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের বাঁচার আশায়।

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়?
ভোটের ডঙ্কা বাজে নাগরিক শঙ্কায়।

তবে,

যদি লাগে যুদ্ধ যদি যায় প্রান,
সবে মিলি বলি মোরা মেরা ভারত মহান।

মরছে মরুক প্রান কি বা যায় আসে,
আমরা তো মরেই বাঁচি জীবন মরন সন্ত্রাসে।

ওবি ভ্যান ছুটে যায় শোকাতুর বাইটের আশায়
চোখের জলও বিকোচ্ছে আজ এই অসময়ে।

কফিন বন্দী হয়ে ছেলে ঘরে আসে
মায়ের কোল খালি হলে তার যায় আসে।


~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ছোট্ট মাইলস্টোন - টেঁয়া, মুর্শিদাবাদ

আজ বড় আনন্দের দিন আমাদের। অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পন্ন হল আমাদের প্রিয় ইস্কুলের অতি প্রিয় বন্ধুদের অকৃপন সহযোগিতায়।

আরিয়াদহ কালাচাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পৌঁছে গেল সুদুর মুর্শিদাবাদ এর প্রত্যন্ত টেঁয়া গ্রামে।

পরলোকগত বন্ধু রক্তিমের আত্মার শান্তি কামনা করলাম আমরা সবাই মিলে।

এতটা বছর পর আমরা মানসিক ভাবে সব্বাই একে অপরের পাশে দাঁড়ালাম।

এক শারীরিক ও আর্থিক ভাবে অক্ষম ভাই কিছু টা হলেও তার গতিশীলতা ফিরে পেল আজ।

সর্বোপরি আগামী প্রজন্ম দেখল তাদের বাবা কাকারা কি আন্তরিক ভাবে এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে বাস্তব রুপ দিল।

হলফ করে বলতে পারি দেশ কাল সীমানার বেড়া জাল ভেঙে চুরে খান খান হয়ে গেল আজ আবার।

আরিয়াদহ, দক্ষিণেশ্বর, বেলঘরিয়া, সোদপুর তো বটেই,
বেহালা, গড়িয়া এমন কি সুদুর আমেরিকার মিচিগান শহরের কোন এক প্রান্তের এক টুকরো হৃদয় সারাদিন ছুটে গেছে অচেনা অজানা টেঁয়া গ্রামে।

নিজেদের আনন্দের মাঝে আমরা যেন এই ভাবে ছোট ছোট প্রচেষ্টায় মানুষের পাশে থাকতে পারি, এই প্রার্থনা করি পরমেশ্বরের কাছে।

পুস্পেন, সঞ্জয়, সন্দীপ, সন্দীপন তোদের কুরনিশ জানাই। যে অক্লান্ত পরিশ্রম তোরা আজ করলি তার জন্য কোন প্রশংসাইই যথেস্ট নয়।

অমিত আবারো প্রমান করল ওর স্বভাব অধিনায়কত্ব।

টেঁয়া গ্রামের ভাই খুব ভাল থাকুক।

সব্বাই খুব ভাল থাকিস। পাশে থাকিস এই রকম ভাবে।

এক একটা দিন ঝড় ওঠে

বছরের এই সময়টাতেই কৃশ্নচূড়া গাছ গুলোতে রঙ লাগে। হালকা করে মাথার ওপর পাখা চলে। সোয়েটার, চাদর গুলোকে যত্ন করে ন্যাপথলিন সহযোগে আলমারি তে চালান করা হয়। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে কপালে ও সারা শরীরে। কোকিল জানান দেয় বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।

ঠিক সাত বছর আগে ফেব্রুয়ারি মাসের পঁচিশ তারিখ টা ছিল শনিবার। হ্যা ঠিকই ধরেছেন দুহাজার বারোর কথা বলছি। শনিবার আমার অফিস ছুটি থাকার কারনে বাড়ির কাজকর্মেই কেটে গেল সকাল টা। আমি ও সীমন্তিনী (আমার স্ত্রী) একটু বেড়িয়েছিলাম টুকিটাকি বাজার করতে ঘন্টা খানেকের জন্য। মা বাড়িতেই ছিল। মেয়ে তখন ইস্কুলে। ইস্কুল বাসে ফিরবে বিকেলে তিনটে নাগাদ। আর বাবার ফেরা বিকেল বেলা।

আমরা বাড়ি ফিরে স্নান করে খেতে বসার আগেই ফোন এল বাবার। বলল লাঞ্চ করে গাড়িতে উঠছে। বিকেলবেলার আগেই বাড়ী পৌছে যাবে। বিকেলের চা টা খাওয়া হবে একসাথেই।

খাওয়া সেরে দুপুর আড়াইটে নাগাদ খবরের কাগজ টায় চোখ বোলাচ্ছিলাম। দিনটা চলছিল বেশ দুলকি চালে। মার মোবাইলে যখন ফোনটা এল ঘড়িতে তখন পৌনে তিনটে ।

মা আমাকে ফোন টা দিয়ে বলল দেখ তো কোনো থানা থেকে ফোন করছে। কি বলছে ফোনে কিছুই বুঝছি না। মায়ের সারাটা শরীরে কাঁপুনি। কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে গেছে তার।

আমি ফোনটা হাতে নিতেই ওপারের কন্ঠ বললেন উলুবেড়িয়া থানা থেকে ওসি বলছেন। এখুনি যেন আমরা চলে আসি থানায়। একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। ফোন নাম্বারটা উনি পেয়েছেন যাত্রীর পকেট থেকে।

বাবার মোবাইল ফোন ছিল না। একদিন আগেই যাদের সাথে গেছিল বেড়াতে তাদের একটা নম্বরে বহুবার ফোন করেও পেলাম না। সুইচ অফ।

আমার নিজের ইন্দ্রিয় গুলো কোন কাজ করছিল না মিনিট খানেকের জন্য। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাচ্ছিল। মা এবং আমার স্ত্রীকে দেখলাম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।  সম্বিত ফিরে পেলাম। বসে থাকার সময় নেই এখন।
একটা গাড়ি নিয়ে আমি ও জ্যাঠতুতো দাদা ছুটে গেলাম উলুবেড়িয়া র উদ্দেশ্যে। পথ টা মনে হচ্ছিল যেন অন্তহীন।

থানায় পৌছাতে ওসি বললেন উলুবেড়িয়া হাসপাতালে যেতে। ওখানেই নাকি পাবো বাবাকে।
কাছেই হাসপাতাল। ছুটলাম বুকে অনেকে আশা নিয়ে। স্থানীয় জনতা থিকথিক করছে হাসপাতালের বাইরে। আমরা পৌছাতেই স্থানীয় নেতা গোছের কিছু লোক পৌছে দিল আমার বাবার কাছে। সাদা চাদরে মাথা থেকে পা অব্ধি সারাটা শরীর মোড়া। হাসপাতাল সুপারের তত্বাবধানে ওই দেহ টা শনাক্ত করতে হবে। স্বীকার করছি, চুড়ান্ত স্বার্থপর হয়েছিলাম আমি ওই একটি বার। ঈশ্বর কে ডাকছিলাম চাদর সরালে যেন অন্য কোন মুখ দেখি। ঈশ্বর কথা রাখেননি। এরপর আইনগত সমস্ত জটিলতা। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আমার বাবা তখন বডি হয়ে লাশকাটা ঘরে শায়িত।

চার বন্ধু যারা মর্নিং ওয়াকের সাথী ছিলেন তারা একসাথেই চলে গেলেন। আমাদের পরিবারের কাছে এই চলে যাওয়াটা অনেকটা হারিয়ে যাওয়ার মতন। সত্যি বলছি আজও কেমন ঘোরের মধ্যে থাকি যখন দিনটার কথা মনে পড়ে।

ওই দিন সড়ক দুর্ঘটনায় একসাথে প্রান হারিয়েছিলেন মর্নিং ওয়াকের চার অতি সজ্জন বন্ধু, আমার বাবা সমর মুখোপাধ্যায়, তাপস বিশ্বাস, শ্যামল দাশ ও সমীর বাগ। সকলেরই বয়স ছিল ষাট থেকে সত্তরের ভিতর। প্রত্যেকেই স্থানীয় বাসিন্দা। সেদিন শোকাচ্ছন্ন হয়েছিল আরিয়াদহ।

বাবা, যেখানেই থাকো। ভাল থেকো। চিরশান্তিতে থেকো।
মর্নিং ওয়াকের কাকুরা, আপনারাও ভাল থাকবেন। চিরশান্তি তে থাকবেন।

প্রনাম।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ধান্দাবাজ

অশালীন হলে তুমি
আমি তবু সাধু,
আমি তো জয়ীর দলে
তুমি হেরো শুধু।

ফুরিয়েছে প্রয়োজন
মিছরি মুড়ির এক দর,
সম্মান কি আশা করে নি
বাবলু সাঁতরার পরিবার।

বন্ধু ছিলে সুখের দিনে
ছাড়লে সঙ্গ আজ
অসময়ে তুমি ভীষন রকম
হলে ধান্দাবাজ।

বিষ ঢুকেছে মনের ঘরে
রাম রহিমের ছুতো
জাতের নামে বজ্জাতি আজ
রাজনীতিকের গুঁতো।

রামের নামে জয়ধ্বনি
বাড়ছে টিআরপি,
রাম রাজত্বের স্বপ্ন দেখাও
শাবাশ বিজেপি।

বড় অস্থির এই অসময়ে
মগজে দাও শান
জাত ধর্মের কুটকচালে
না যায় কোন প্রান।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ৩০ মে, ২০১৯

সমব্যথী

ঘড়িতে সময় রাত নটা দশ। রাতের আরামবাগ লোকাল ছুটে চলেছে হাওড়ার দিকে। কামরা মোটামুটি ফাকাই। কামরায় বাড়ি ফেরতা ক্লান্ত মানুষ। বেশিরভাগই তন্দ্রাচ্ছন্ন। আবার কারো কানে গোঁজা ইয়ারফোন। কারো আবার নজর মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে। কিছু দেহাতি লোক খৈনি ডলছে। আর দুয়েক টা পরিবার চলেছে হাওড়ায় দুরপাল্লার ট্রেন ধরবে বলে।

কামরায় লজেন্স বিক্রি করছেন এক অন্ধ মানুষ। হাতে অন্ধের লাঠি। তবু সটান শরীর। মাঝে মাঝে বলে চলেছেন লজেন্স, এক টাকা পিস, পাচ টাকায় ছয় পিস।  বলাই সার, কিনছে না কেউ। তবু তিনি বলেই চলেছেন, বিক্রির আশায়। ট্রেন বালি স্টেশন ছাড়লো। অন্ধ ব্যক্তি গেটের এক পাশে বসে পড়লেন ক্লান্ত হয়ে।

একটি বছর তিরিশের ছেলে ট্রেনে উঠল বালি স্টেশন থেকে। প্রায় হাত ও পায়ে ভড় করে। সেরিব্রাল পালসি তে আক্রান্ত। হাত পা সম্পূর্ণ বাঁকা। মুখ দিয়ে গোঁঙানির মতন আওয়াজ করে ভিক্ষা চাইতে লাগল। ভুল বললাম, চাওয়ার ক্ষমতা তার নেই, কোন মতে মুখ দিয়ে আওয়াজ করে পেটে হাত দেখাচ্ছে দুটো খাবারের আশায়।
পাশ দিয়ে একটা ট্রেন ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে গেল। ছেলেটি চেঁচিয়েই চলেছে অবিরাম। মোবাইলে ব্যস্ত বা ক্লান্ত মানুষের কানে পৌছাচ্ছে না সেই আওয়াজ। বা পৌছালেও কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। এতো নিত্যদিনের ব্যাপার।
হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন অন্ধ লজেন্স বিক্রেতা। গেটের পাশেই তিনি বসে ছিলেন। ঝোলা থেকে কিছু পয়সা বের করে আওয়াজ শুনে শুনে এগিয়ে এলেন ভিখারি ছেলেটার দিকে। তুলে দিলেন তার সাধ্য মতন সাহায্য। আর গোটা দুয়েক লজেন্স ও একটা পাউরুটি। ভাবলেশহীন ভাবেই আবার গিয়ে বসে পড়ল গেটের পাশেই। ক্লান্ত, শ্রান্ত, মোবাইলে নিবিষ্ট ও তথাকথিত সভ্য মানুষের গালে একটা সপাটে চড় কষিয়ে।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ৩ জুন, ২০১৯

পাঁচ'ই জুন

পাড়ায় ছিল ছোট্ট পুকুর
তাতে হাঁটু জল,
দুপুর বেলায় খাবার পরে
বাসন মাজার ঢল।

পুকুর পাড়ের মাছরাঙারা
পানকৌড়ির দলে,
মাছের লোভে ঘাপটি মেরে
থাকত বসে ডালে।

আর ছিল সেই গাছটা সতেজ
সবুজ কচি পাতা,
গাছের কোলে বাঁধতো বাসা
চন্দনা আর তোতা।

কাঠবিড়ালি, চড়াইপাখি
প্রজাপতির ঝাঁকে,
প্রত্যেকদিনই মরছে ওরা
সভ্যতার এই বাঁকে।

থাকবে কোথায় বুলবুলি
এই অট্টালিকার ভিড়ে,
ঘুম ছুটেছে ময়না, টিয়ার
মৃত্যু রয়েছে ঘিরে।

কাঠঠোকরার ঠক ঠক
আর রাতে ব্যাঙের ডাক,
এই সব ডাকই পেনড্রাইভের
মেমরি জুড়ে থাক।

রেডিয়েশনের তীব্র ঝাঁজে
ডাবের গায়ে দাগ,
দাগ কাটছে বুকের ভেতর
জমে উঠছে রাগ।

বছর বছর আসে ঘুরে
আবার পাঁচই জুন,
পরিবেশ তো খাচ্ছে কুড়ে
উন্নয়নের ঘুণ।


~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ জুন ৪, ২০১৯

Sunday, May 26, 2019

বাজার

অদৃশ্য এক দেওয়াল উঠল মনের কোনে
ভরসা হীনতার রোজকার এই দিনযাপনে।
বিশ্বাস এই শব্দ শুধুই অভিধানে
যায় কি পাওয়া ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজোনে?

শপিং মলের ঠান্ডা হাওয়ায় বিকিকিনি
পাড়ার মোড়ে মারছে মাছি ওই দোকানি।
চোখের সামনে আসছে বোঝাই পন্য অপার
বিগ বাস্কেট, গ্রফার দিচ্ছে মস্ত অফার।

মানুষ এখন হচ্ছে চতুর দিনে দিনে
পাল্লাদিয়ে চোখ এঁটেছে স্মার্ট ফোনে।
যদি ফস্কায় কোন অফার হদ্দ বোকা
বদলে যাওয়ার সময় ঘড়ির ঘুরছে চাকা।

এই কিছুদিনে আগেও তুমি বন্ধু ছিলে
সব্জীওলা, মাছের বাজার নিত চিনে।
গ্যাসের বুকিং, হরিন ঘাটার দুধের ভিড়ে
ছিল বিনিময় কুশল সবার থাকতো ঘিরে।

ছিড়ছে সুতো সম্পর্কের একলা ঘুড়ি
চার দেওয়ালের মধ্যে আমরা ডুকরে মরি।
কেউ চেনে না কেউ জানে না এই সত্বা
ভোগবাদের এই দুনিয়াদারীর সারবত্তা।


~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ২৬ মে, ২০১৯

এখন বিকেল

বহু দূর থেকে ভেসে আসছে চেনা গানের সুর। এই সময়টাতে মাথার ওপর পাখাটার দম ফেলার সময় নেই। একই কক্ষপথে ঘুরে চলেছে অবিরাম। আমাদের বাড়ির পাশের নিম গাছে যে পাখি গুলো বাসা বেঁধে থাকে তাদের এখন ঘরে ফেরার পালা। স্ট্রিট লাইটের জ্বলে উঠতে বাকি ঠিক পনেরো মিনিট। ঘ্যারঘ্যার শব্দে শাটার তুলছে মুদির দোকানি। চেনা পথে হন্তদন্ত হয়ে হেটে চলে যাচ্ছে অচেনা অনেক তরতাজার দল। পাশের বাড়ির ছোট্ট মেয়েটা রোজকার মতন রেওয়াজে বসবে এখন।

আমার বাড়ির গোটা চারেক বাড়ির পরেই মুসলমান পল্লী। সেখানে এখন রমজানের রোজা ভাঙার প্রস্তুতি। ক্লান্ত সবাই। মসজিদে আজান শেষ হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হল।

আমার ঘরের আলোটা ক্রমে কমে আসছে। বিকালের চা শেষ হয়েছে বেশ কিছু সময় আগে। তবু আলো জ্বালাতে ইচ্ছা করছে না। এই আবছায়াটাই বেশ উপভোগ করি এখন। টিভি সিরিয়াল শেষের পরিচিত টাইটেল ট্রাকের পরেই এখন বেজে ওঠে শাঁখ। যদিও তার বেশ কিছু আগেই আকাশে ফুটে উঠেছে সন্ধ্যা তারা। ঠিক এই সময়টাতেই রোজ মাথায় ঝুড়ি বোঝাই করে কুলফিমালাই ওলা হেকে যায়। আর যায় বেলফুলের মালা হাতে নিয়ে ফুলওলা ঠিক এই সময়টাতেই। তার অনেক আগেই চলে গেছে ঘুগনিওয়ালা আর ফুচকাওয়ালা রোজকার মতন।

যত দিন যাচ্ছে, খেলা পাগল ছেলেমেয়ের দল যেন কমে আসছে। সবাই সামিল আজ ইঁদুর দৌড়ে। কিন্তু দৌড়োতে গেলে তো শারীরিক সক্ষমতা লাগে। সময়ের তালে ছুটতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পরার উপক্রম।

আজ বোধহয় বৃষ্টি হবে। কালো পিঁপড়ের দল মুখে ডিম নিয়ে লাইন লাগিয়েছে নিরাপদ স্থানের দিকে। বড্ড গরম পরেছে কয়েক দিন হল। গাছের পাতাগুলো কাঁপছে তিরতির করে। গোটা চারেক আরশোলা বেড়িয়েছে তাদের খাবারের সন্ধানে। আর দেওয়ালের টিকটিকিটা অপলক চেয়ে আছে। দৃষ্টি মনে হয় শিকারের দিকেই। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে আসছে মফস্বলে, আমার পাড়ায়, আমার ঘরে।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ২৫ মে, ২০১৯

প্রতীক্ষা

তাবড় তাবড় রাজনৈতিক দল
আর জাঁদরেল নেতা,
উড়েছে ঘুম, কেটেছে বোল,
ছুটেছে তাদের কেতা।

ভোটের পরের এই কটা দিন
জন গনেশই রাজা,
কাটছে না দিন, বিনিদ্র রাত
নেতার এটাই সাজা।

গনতন্ত্রের কি মাহাত্ম্য,
বুঝছে রাজা আর আমাত্য
আজ প্রজারা সদাই হাস্য
প্রহর গুনছে রাজা।

ক্ষমতা দখল করবে যারা
জন গনেশের রায়ে,
গুছিয়ে নেবে আখের তাদের
রেখে গনেশ কে বাঁয়ে।

আমরা প্রজা, হদ্দ বোকা
ভোট দিতে যাই নেচে,
নেতা যেই হোন মুচকি হাসেন
দিব্বি থাকেন বেঁচে।

মরে গরিব গুরবো গুলো
উলুখাগড়া র দল,
ভোট মিটলেই রাজায় রাজায়
চল জলকে চল।

ছোট্ট ঘেরা একফালি ঘরে,
কোথায় যে কে বোতাম টিপে,
গন তন্ত্রের মহোৎসবে
প্রজা নিয়েছেন মেপে।

যিনিই বসুন মসনদেতে
জন মানসের ভোটে,
মিনতি মোদের করজোড়ে তে
সবার যেন ভাত জোটে।

হানাহানি নয়, শান্তি আসুক,
বেকার রা পাক কাজ
কৃষি বাঁচুক, শিল্প আসুক
আসুক ভরসা আজ।


~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ২০ মে, ২০১৯

উন্নাসিক

বলো কি চাই তোমার আজ
নেই চাইতে কোন লাজ
মন্ডা মিঠাই কোপ্তা পোলাও
নাই বা হল আজ
ভোট মিটলেই থালা ভরে
দেব তোমায় কাজ।

চাই শান্তি চাই চাকরি
চাই শিক্ষা চাই দীক্ষা
চাই শাসন নয় ভাষণ
চাই ভরসা পেলে আসন।

স্লগ ওভারে মাইক হাতে
আমরা এখন কল্পতরু
উঠছে গাছে গল্পের গরু
শেষের থেকে হচ্ছে শুরু
নটে গাছ তো মুড়োচ্ছে না।

চার বছরের ব্যবধানে
আবার আমরা ভোট দানে
অবাধ্যতায় অপমানে
লেপবো কালি আঙুলে।

আজ আমরা সবাই রাজা
ভাবছি সবাই কি আপন
কিন্তু আবার ভোট মিটলেই
যে যায় লঙ্কায় সেই রাবণ।

এবার একটু অন্যরকম
যেন সবই আনকমন
তুমি বন্ধু কোন মেরুতে
কোন ধর্মের সাতকাহন।

বাজার ওলা, সব্জিওলা
কিংবা চেনা রাজমিস্ত্রি টা
প্রান্তিক সেই মানুষ গুলো
কোন মেরুতে বল সেটা।

কি লাভ ভেবে এই ছাইপাঁশ
তার চেয়ে চল কাটিয়ে পাশ
ধান্দাবাজির কারবারে আজ
জমিয়ে মজা না থাক কাজ।

হতভাগার কপাল মোদের
খেলেছে নিয়ে রাজনীতিক
ইতিহাসে কি থাকবে লেখা
আমরা ছিলাম উন্নাসিক।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ১১ মে, ২০১৯


.........., জিতবো রে

হাজার ওয়াট আলোর নিচে
লক্ষ মানূষ করছে ভিড়
একটু দুরেই নিকশ কালোয়
ক্ষিদে চাপছে আমার বীর

রাসেল আজকে ম্যান অফ দা ম্যাচ
খেলা মোটে দুই কুড়ির
কুড়ি দিন তো পার করেছি
আসছে দিনের প্রস্তুতির।

লাইন দিয়ে টিকিট হাতে
মাথায় বেধে ফেট্টিটা
আমাদের প্রতিবাদের ভাষার
শোনাও না সেই ছন্দটা

ছোট্ট খোকা যাচ্ছে ইডেন
করতে বরণ ক্রিকেট বীর
না খাওয়া ওই মুখ গুলো সব
পাংশু মুখে লক্ষে স্থির।

হাজার ডেসিবেলের শব্দে
কাঁপছে আকাশ হাসছে মাঠ
নিঃশব্দে খিদে চেপে
প্রতিবাদীর চোয়াল কাঠ।

ঠিক জানা নেই কিসের জন্য
থমকে চাকরি মাঝপথে
রোদ, জল ঝড় মাথায় নিয়ে
রয়েছে পরে রাজপথে।

যতবার ভেসে আসছে হাওয়ায়
কোরবো লড়বো জিতবো রে
চোয়াল গুলো হচ্ছে কঠিন
মেয়ো রোডের ঠিক মোড়ে

রাজনীতি নয় সহানুভূতি
আর্জি হতে মানবিক
ওদের দাবী মানতে রাজি
বাধ্য হবেই যে দাম্ভিক।

অনুরোধ আজ সবার কাছে
মিটবে বাঁধা কাটিয়ে টেট
ফুটবে হাসি সবার মুখে
চাকরি প্রার্থী ভরবে পেট।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ২৪ শে মার্চ ২০১৯

দোলের স্মৃতি

পাড়ার কৃষ্ণচূড়া গাছটার মতন বছরের এই সময়টাতে সকলের মন রঙিন হয়। অবহেলায় বেড়ে ওঠা গাছটা প্রতি মুহূর্তে জানান দেয় এখনো বসন্ত আসে আমাদের এই পোড়া দেশে। স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই দূর থেকে ডেকে ওঠে বোকা কোকিলটা। ছেলেবেলায় পড়ার ফাঁকে আমরাও ওই কোকিলের স্বরে ডাকতাম আর বোকা কোকিলটাও সাড়া দিত আরো জোরে।

এখন পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া দেখতে শহুরে হুজুগে মানুষ ছুটে যান পুরুলিয়ার গ্রাম গুলোতে। দামী ক্যামেরা সাথে নিয়ে। ফেসবুকের দেওয়াল লাল হয়ে ওঠে পলাশের রঙে। মন কতটা রঙিন হয় জানিনা, তবে বেশ একটা দেখনদারি লক্ষ করা যায়।

আমাদের এই অঞ্চলে আগে অসংখ্য জুটমিল ছিল। ফলে দিন আনা দিন খাওয়া দেহাতি লোকের বাস ছিল। চটের বস্তার গায়ে যে রঙ দিয়ে লেখা হত, সেই রঙ এই সময়টাতে জুটমিলের দেহাতি লোকেদের হাত ঘুরে চলে আসতো আমাদের কাছে। ওনারা ওই রঙ কখনোই বিক্রি করতেন না। সকলের সাথে ভাগ করে নিতেন স্বেচ্ছায়। দোলের পরেও ওই বাঁদূরে পাকারঙ আমাদের গায়ে লেগে খাকতো কমপক্ষে দিন পাঁচেক। আর হাতের চেটোতে কমপক্ষে পনেরোদিন। জুটমিলে শ্রমিক দের মধ্যে দেহাতি লোক ছাড়াও বেশ কিছু উড়িয়া লোকও ছিলেন তারাও দোল উৎসব পালন করতেন যত্নে তাদের উড়িয়া পট্টিতে। ওখানের গানের সুর ও তাল টাও বেশ মজার ছিল। বিকাল বেলা পালকি করে রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ নিয়ে বেরোতেন ওরা। আনন্দময় হয়ে উঠত চারপাশ। সাধারন মানুষ সাধারন ছিলেন। খুব ছোট ছোট কাজেও সবাই আনন্দে মেতে উঠতেন।

দোল তখনো এতটা হোলি হয়ে যায় নি। পাড়ার হরিসভায় হরিনাম সংকীর্তন হত অষ্টপ্রহর। এখনো এটা বজায় আছে তবে জাঁকজমক কমেছে অনেক। দোলের পরে সাতদিন ধরে কীর্তন গান হত আর শেষের দুদিন যাত্রাপালা হত। প্রথমদিন কোলকাতা থেকে যাত্রাদল আসতো আর শেষদিন পাড়ার লোকেরা মিলেই যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করতেন। আমরা ছোটরা সাজঘরে উকি দিতাম। অতি সাধাসিধে মানুষ কি রকম ভাবে ভয়ংকর রাবন রাজায় সেজে উঠতেন দেখতাম অবাক চোখে। আসলে তখন তো ঘরে ঘরে টিভি ছিল না। সাজঘরে উকি দিয়েই একবার সীতাকে বিড়ি খেতে দেখেছিলাম। বিস্ময়টা ছিল মনের ভিতর বহুদিন।

দোলপূর্নিমার আগে র রাতে গঙ্গা থেকে জল সয়ে এসে শুরু হত হরিনাম গান। গঙ্গার ওপার থেকে দেখা যেত উত্তরপাড়ার দোল তলার আতশবাজি পোড়ানো।একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম। পাড়ার হরিসভা থেকে প্রথম প্রথম গানের আওয়াজ পাওয়া গেলেও একটু রাত বাড়লে শুধুই শ্রীখোল আর খঞ্জনির আওয়াজ ভেসে আসতো কানে। চাঁদের আলোয় ভেসে যেত ঘর। আর তার সাথে মাঝে মাঝে শ্রীরাধা গোবিন্দ জয়ো ধ্বনি। একরাশ মায়া তৈরি হত মনের কোনে।

এই সময়টাতে, বেশ কিছুদিন ধরে ঝরে যাওয়া পাতা গুলো সংগ্রহ করে রাখতাম আমরা। সাথে ফেলে দেওয়া মিস্টির হাড়ি। নারকেল গাছের পাতা ও সুপুরি পাতার কদর ছিল সবথেকে বেশি।  ইস্কুল থেকে ফেরার পথে যে যেমন পারতো শুকনো পাতা জড়ো করতাম আমরা ন্যাড়াপোড়ার জন্য। আর বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হত আলু। আলুপোড়া খাওয়া হত খুব মজা করে। এখন এই শহরতলি তেও খুব একটা দেখতে পাই না। তবে কিছু কিছু জায়গায় এখনো হয় বলে শুনি। আমরা চ্যাঁচোর বলতাম।

এই দোল উৎসবের মধ্যে একটা সাম্যবাদ দেখতে পাই। আগের দিনের বাঁদূরে রঙ বা এখনকার সময়ের ভেষজ আবিরে রঙিন হওয়ার পর পাড়ার ডাকসাইটে দাদা ও সাইকেলের দোকানের মেকানিক সবাই সমান।  বেলা বাড়ার সাথে সাথে সবার গায়ের জামাই ইলেক্ট্রিকের তারে। ফ্যাকাসে রাস্তাতেও তখন রঙের কারুকাজ।

দোলের সকাল বেলা টা শুরু হত, বাড়ির গুরুজন দের পায়ে ফাগ দিয়ে। জলখাবার খেয়ে স্থানীয় বন্ধুরা মিলে আমরা রঙ খেলতাম। হ্যা সেই বাঁদূরে রঙ দিয়ে। আমরা কখনোই দেখার সুযোগ পাই নি যে রঙ মাখার পর আমাদের এই চাঁদ বদনটাকে কি রকম দেখায়। তবে রঙ খেলে বাড়ি ফিরলে প্রতি বছরই মা বলতো নাকি ভুতের মতন লাগছে।

এখন দোল খেলার থেকেও বিভিন্ন বিভঙ্গে নিজের ছবি তোলার হিরিক লক্ষ করি। নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে ওই ছবি সাঁটানো না অব্ধি কারো যেন শান্তি নেই। তারপর পছন্দ হোক বা না হোক লাইকের কাউন্টিং। শো অফ টা বড্ড চোখে লাগে।

এই বিশেষ সময়ে বাজারে আসে বিভিন্ন রঙের মঠ ও ফুটকড়াই ও মুড়কি। আমাদের ছেলেবেলায় দোলের পরে রঙিন মঠ লেবুর জলে গুলে খাওয়ার মজা এখনকার প্রজন্ম ভাবতেই পারবে না। হ্যা অবশ্যই কাঁচের গ্লাসে।আসলে এখনকার এই চুড়ান্ত বিশ্বায়নের জুগে সব ভীষন সহজলভ্য।

মানুষের মন অনেক বেশি রঙিন ছিল। ভরসা ছিল, বিশ্বাস ছিল পাকা রঙের মতন গাঢ়। তাই সেই রঙ টাকে ফলাও করে বাহ্যিক করে তুলতে হত না। এখন এই সমাজের অন্তরের রঙ এতটাই ফ্যাকাসে, যে 'লাগে মাস্কারা দু চোখ আঁকতে। ক্লান্তির কালো রঙ কে ঢাকতে'।
সবাই দেওয়াল ভরিয়ে তুলে জানান দিতে চায় দেখ 'কি সুখে রয়েছি আমি'।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ২১ শে মার্চ ২০১৯

Tuesday, February 26, 2019

আজ তোমার সাথে আড়ি

মেহেদী হাসান, গুলাম আলি
আজ তুমি সন্ত্রাসী
কাল তোমার সাথে ভাব
আজ আমি বড্ড আগ্রাসী।

তোমার সেই স্বপ্নের স্পেল
মন্ত্রমুগ্ধ পরাক্রম
তোমার বোলিং দেখব না আর
ওয়াসিম আক্রম।

কাল তুমি ছিলে শান্তি মিছিল
উগ্র দেশপ্রেমে
আজ মাতলে উল্লাসে
রাজপথে নেমে।

মোমবাতিটার নেই তো দেশ
কাল সীমানার গন্ডী
কাল জ্বলেছে সীমান্তে
আর আজ উগ্রচণ্ডী।

কত সন্ত্রাসী মরলো যে আজ
যুদ্ধ বিমান হানায়
মিরাজ কি সে চিনতে পারে
না কি তাকে কেউ চেনায়।

মধ্যবিত্ত আমরা বাঁচি
দিন গুজরান মায়ায়
মানুষ যারা মরল যে আজ
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়।

তুমি মারবে পঞ্চাশ
আর আমি মারবো দুশোয়
রাজনীতিবিদ ঠাঁই পেয়ে যাবে
মোমের মাদাম তুসোয়।

নিলাম বদলা এক পশলা
হঠাৎ শিলা বৃস্টি
এপারে আজ কালবৈশাখী
ওপারে গোলাবৃস্টি।

দোহাই তোমায় দিব্যি বলছি
করিনা রাজনীতি
হঠাত রাতে ঘুম ভেঙে যায়
গণহত্যায় ভীতি।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

Thursday, February 14, 2019

ভালোবাসার দিনে

যাচ্ছে হয়ে হন্তদন্ত সদ্য শাড়ী
সাথে হলুদ পাঞ্জাবী হালকা দাড়ি
থাকুক ভাল, রাখুক ভাল এই আকালে
ভালবাসার উদযাপনের এই সকালে।

ক্লাস নাইনের মিষ্টি নিতাও ভালোবাসে
কিডনি রোগে রুগ্ন বাবার সত্তাটাকে
তার কাছেও উদযাপন এই ভ্যালেন্টাইন
ডায়ালিসিস শেষে বাবার নেইকো টাইম।

আর হায়দার বস্তির ওই ঘুপচি ঘরে
ছোট্ট মিনার একফালি হাত আঁকড়ে ধরে।
কেউ নেই ওর এই দুনিয়ায় মিনা ছাড়া
ভ্যালেন্টাইন বুড়োর চোখে জলের ধারা।

লিখুক ছাপুক আর্চিও তার গ্রিটিংস কার্ডে
মানুষ কেমন এই আকালেও স্বপ্ন দেখে।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯

দুঃসময়

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? সন্ত্রাসে মরে সেনা মন্ত্রীরা করে হায় হায়। সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? মৃত সেনার ছবি খবরের পাতায় পাতায়। ...