ভোরের দিকেই ছায়াছবির মত ফুটে উঠত দৃশ্য গুলো। দৃশ্য না বলে ঘটনা বলাই মনে হয় ভাল। তখন দিবাকর ক্লাস নাইনে পড়ে। পরের দিন ইন্ডিয়া শ্রীলংকা ওয়ানডে। ফাইনাল ম্যাচ। ভোর রাতে দিবাকর দেখল সৌরভ এক রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করল। কিন্ত ইন্ডিয়া ম্যাচ জিতল। ঠিক সেটাই ঘটল পরের দিন ম্যাচে।
কিছুদিন পর দেখল দুর্গা পুজোর সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী জল থইথই। ঠিক সেটাই ঘটল সেবছর পুজোর দিন গুলোতে।
ঘটনা গুলো এলোমেলো ভাবে আসতো ভোর রাতেই। প্রথম দিকে তেমন পাত্তা দিত না। কিন্ত এই ভোর রাতের ছায়াছবি দেখাটা দিবাকরের অভ্যাসে পরিনত হল।
ওর নিজের যাতে সুবিধা হয় তেমন কিছু ঘটনা আগে থেকে দেখতে পেলে বরং ভালই হত। কিন্ত তা কখনই হয় নি। কতবার পরীক্ষার আগের রাতে শোবার সময় ভেবেছে যদি প্রশ্ন গুলো সামনে ধরা দেয়। না তা কোনোদিনও হয় নি।
লেখাপড়ায় অতি সাধারন ছাত্র। কোন মতে টেনেটুনে গ্রাজুয়েশনটা পাশ করল। তারপর সেলসের চাকরি জোটালো একটা কোম্পানিতে।
ভোররাতের এই ছায়াছবির কথা কখনো কাউকে বলে নি দিবাকর। কারন বললেও কেউ বিশ্বাসই করবে না এসব। আজগুবি বলে হেসে উড়িয়ে দেবে।
সেই যেদিন ফ্লাইওভার ভেংগে পড়ল, তার কিছুদিন আগেই দিবাকর দেখে ফেলেছিল সেই দৃশ্য। আফসোস হয় মাঝে মাঝে, যদি আগে থেকে সকলকে সাবধান করে দেওয়া যেতো।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের জয়, আয়লা ঝড়ের তাণ্ডবলীলা, পশ্চিমবঙ্গ এর রাজনৈতিক পালাবদলের ছবি দেখে ফেলেছিল ঘটনা ঘটার আগেই।
সংকোচে কাউকে কখনো বলতে পারে নি সারাজীবন অন্তর্মুখী স্বভাবের দিবাকর। আনন্দের ঘটনা দেখলে যেমন মজা পেত, তেমনি, দুঃখের কিছু ঘটনা ঘটতে দেখলে মন টা খুব ভারী হয় যেত। ভীষন অস্বস্তি হত। ভয়ানক কিছু দেখলে আর ঘুমাতে পারতো না। ভোর রাতে বিছানা ছেড়ে ঘরে পায়চারি করত।
সেদিন বিকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃস্টি হচ্ছিল। তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়লো। ঘুম নেমে এল সহজেই।
শবযাত্রা চলেছে। হরিধ্বনি ভেসে আসছে। খই উড়ছে বাতাসে। উগ্র ধুপের গন্ধ ভেসে আসছে নাকে। পাড়ার লোকেরাই কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে চলেছে মড়াটাকে। পাড়ার কেউ মারা গেল নাকি? কৌতুহলে চোখ গেল মড়ার দিকে। ছোট খাটো ক্ষয়াটে চেহাড়া। চোখে তুলসীপাতা, নাকে তুলো, গলায় রজনীগন্ধার মালা। দিবাকর নিজের মুখটা দেখে ধড়মড়িয়ে উঠে বসল বিছানাতে। সারা শরীর ভিজে গেছে ঘামে।
সেই ভোরের ছায়াছবির পর আর কিছু কখনো দেখেনি দিবাকর।
সৌমিক মুখোপাধ্যায়
১৬ মে, ২০১৮। বুধবার।
কিছুদিন পর দেখল দুর্গা পুজোর সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী জল থইথই। ঠিক সেটাই ঘটল সেবছর পুজোর দিন গুলোতে।
ঘটনা গুলো এলোমেলো ভাবে আসতো ভোর রাতেই। প্রথম দিকে তেমন পাত্তা দিত না। কিন্ত এই ভোর রাতের ছায়াছবি দেখাটা দিবাকরের অভ্যাসে পরিনত হল।
ওর নিজের যাতে সুবিধা হয় তেমন কিছু ঘটনা আগে থেকে দেখতে পেলে বরং ভালই হত। কিন্ত তা কখনই হয় নি। কতবার পরীক্ষার আগের রাতে শোবার সময় ভেবেছে যদি প্রশ্ন গুলো সামনে ধরা দেয়। না তা কোনোদিনও হয় নি।
লেখাপড়ায় অতি সাধারন ছাত্র। কোন মতে টেনেটুনে গ্রাজুয়েশনটা পাশ করল। তারপর সেলসের চাকরি জোটালো একটা কোম্পানিতে।
ভোররাতের এই ছায়াছবির কথা কখনো কাউকে বলে নি দিবাকর। কারন বললেও কেউ বিশ্বাসই করবে না এসব। আজগুবি বলে হেসে উড়িয়ে দেবে।
সেই যেদিন ফ্লাইওভার ভেংগে পড়ল, তার কিছুদিন আগেই দিবাকর দেখে ফেলেছিল সেই দৃশ্য। আফসোস হয় মাঝে মাঝে, যদি আগে থেকে সকলকে সাবধান করে দেওয়া যেতো।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের জয়, আয়লা ঝড়ের তাণ্ডবলীলা, পশ্চিমবঙ্গ এর রাজনৈতিক পালাবদলের ছবি দেখে ফেলেছিল ঘটনা ঘটার আগেই।
সংকোচে কাউকে কখনো বলতে পারে নি সারাজীবন অন্তর্মুখী স্বভাবের দিবাকর। আনন্দের ঘটনা দেখলে যেমন মজা পেত, তেমনি, দুঃখের কিছু ঘটনা ঘটতে দেখলে মন টা খুব ভারী হয় যেত। ভীষন অস্বস্তি হত। ভয়ানক কিছু দেখলে আর ঘুমাতে পারতো না। ভোর রাতে বিছানা ছেড়ে ঘরে পায়চারি করত।
সেদিন বিকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃস্টি হচ্ছিল। তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পড়লো। ঘুম নেমে এল সহজেই।
শবযাত্রা চলেছে। হরিধ্বনি ভেসে আসছে। খই উড়ছে বাতাসে। উগ্র ধুপের গন্ধ ভেসে আসছে নাকে। পাড়ার লোকেরাই কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে চলেছে মড়াটাকে। পাড়ার কেউ মারা গেল নাকি? কৌতুহলে চোখ গেল মড়ার দিকে। ছোট খাটো ক্ষয়াটে চেহাড়া। চোখে তুলসীপাতা, নাকে তুলো, গলায় রজনীগন্ধার মালা। দিবাকর নিজের মুখটা দেখে ধড়মড়িয়ে উঠে বসল বিছানাতে। সারা শরীর ভিজে গেছে ঘামে।
সেই ভোরের ছায়াছবির পর আর কিছু কখনো দেখেনি দিবাকর।
সৌমিক মুখোপাধ্যায়
১৬ মে, ২০১৮। বুধবার।