Tuesday, June 4, 2019

দুঃসময়

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়?
সন্ত্রাসে মরে সেনা মন্ত্রীরা করে হায় হায়।

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়?
মৃত সেনার ছবি খবরের পাতায় পাতায়।

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়?
দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের বাঁচার আশায়।

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়?
ভোটের ডঙ্কা বাজে নাগরিক শঙ্কায়।

তবে,

যদি লাগে যুদ্ধ যদি যায় প্রান,
সবে মিলি বলি মোরা মেরা ভারত মহান।

মরছে মরুক প্রান কি বা যায় আসে,
আমরা তো মরেই বাঁচি জীবন মরন সন্ত্রাসে।

ওবি ভ্যান ছুটে যায় শোকাতুর বাইটের আশায়
চোখের জলও বিকোচ্ছে আজ এই অসময়ে।

কফিন বন্দী হয়ে ছেলে ঘরে আসে
মায়ের কোল খালি হলে তার যায় আসে।


~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ছোট্ট মাইলস্টোন - টেঁয়া, মুর্শিদাবাদ

আজ বড় আনন্দের দিন আমাদের। অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পন্ন হল আমাদের প্রিয় ইস্কুলের অতি প্রিয় বন্ধুদের অকৃপন সহযোগিতায়।

আরিয়াদহ কালাচাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পৌঁছে গেল সুদুর মুর্শিদাবাদ এর প্রত্যন্ত টেঁয়া গ্রামে।

পরলোকগত বন্ধু রক্তিমের আত্মার শান্তি কামনা করলাম আমরা সবাই মিলে।

এতটা বছর পর আমরা মানসিক ভাবে সব্বাই একে অপরের পাশে দাঁড়ালাম।

এক শারীরিক ও আর্থিক ভাবে অক্ষম ভাই কিছু টা হলেও তার গতিশীলতা ফিরে পেল আজ।

সর্বোপরি আগামী প্রজন্ম দেখল তাদের বাবা কাকারা কি আন্তরিক ভাবে এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে বাস্তব রুপ দিল।

হলফ করে বলতে পারি দেশ কাল সীমানার বেড়া জাল ভেঙে চুরে খান খান হয়ে গেল আজ আবার।

আরিয়াদহ, দক্ষিণেশ্বর, বেলঘরিয়া, সোদপুর তো বটেই,
বেহালা, গড়িয়া এমন কি সুদুর আমেরিকার মিচিগান শহরের কোন এক প্রান্তের এক টুকরো হৃদয় সারাদিন ছুটে গেছে অচেনা অজানা টেঁয়া গ্রামে।

নিজেদের আনন্দের মাঝে আমরা যেন এই ভাবে ছোট ছোট প্রচেষ্টায় মানুষের পাশে থাকতে পারি, এই প্রার্থনা করি পরমেশ্বরের কাছে।

পুস্পেন, সঞ্জয়, সন্দীপ, সন্দীপন তোদের কুরনিশ জানাই। যে অক্লান্ত পরিশ্রম তোরা আজ করলি তার জন্য কোন প্রশংসাইই যথেস্ট নয়।

অমিত আবারো প্রমান করল ওর স্বভাব অধিনায়কত্ব।

টেঁয়া গ্রামের ভাই খুব ভাল থাকুক।

সব্বাই খুব ভাল থাকিস। পাশে থাকিস এই রকম ভাবে।

এক একটা দিন ঝড় ওঠে

বছরের এই সময়টাতেই কৃশ্নচূড়া গাছ গুলোতে রঙ লাগে। হালকা করে মাথার ওপর পাখা চলে। সোয়েটার, চাদর গুলোকে যত্ন করে ন্যাপথলিন সহযোগে আলমারি তে চালান করা হয়। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে কপালে ও সারা শরীরে। কোকিল জানান দেয় বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।

ঠিক সাত বছর আগে ফেব্রুয়ারি মাসের পঁচিশ তারিখ টা ছিল শনিবার। হ্যা ঠিকই ধরেছেন দুহাজার বারোর কথা বলছি। শনিবার আমার অফিস ছুটি থাকার কারনে বাড়ির কাজকর্মেই কেটে গেল সকাল টা। আমি ও সীমন্তিনী (আমার স্ত্রী) একটু বেড়িয়েছিলাম টুকিটাকি বাজার করতে ঘন্টা খানেকের জন্য। মা বাড়িতেই ছিল। মেয়ে তখন ইস্কুলে। ইস্কুল বাসে ফিরবে বিকেলে তিনটে নাগাদ। আর বাবার ফেরা বিকেল বেলা।

আমরা বাড়ি ফিরে স্নান করে খেতে বসার আগেই ফোন এল বাবার। বলল লাঞ্চ করে গাড়িতে উঠছে। বিকেলবেলার আগেই বাড়ী পৌছে যাবে। বিকেলের চা টা খাওয়া হবে একসাথেই।

খাওয়া সেরে দুপুর আড়াইটে নাগাদ খবরের কাগজ টায় চোখ বোলাচ্ছিলাম। দিনটা চলছিল বেশ দুলকি চালে। মার মোবাইলে যখন ফোনটা এল ঘড়িতে তখন পৌনে তিনটে ।

মা আমাকে ফোন টা দিয়ে বলল দেখ তো কোনো থানা থেকে ফোন করছে। কি বলছে ফোনে কিছুই বুঝছি না। মায়ের সারাটা শরীরে কাঁপুনি। কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে গেছে তার।

আমি ফোনটা হাতে নিতেই ওপারের কন্ঠ বললেন উলুবেড়িয়া থানা থেকে ওসি বলছেন। এখুনি যেন আমরা চলে আসি থানায়। একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। ফোন নাম্বারটা উনি পেয়েছেন যাত্রীর পকেট থেকে।

বাবার মোবাইল ফোন ছিল না। একদিন আগেই যাদের সাথে গেছিল বেড়াতে তাদের একটা নম্বরে বহুবার ফোন করেও পেলাম না। সুইচ অফ।

আমার নিজের ইন্দ্রিয় গুলো কোন কাজ করছিল না মিনিট খানেকের জন্য। সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাচ্ছিল। মা এবং আমার স্ত্রীকে দেখলাম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।  সম্বিত ফিরে পেলাম। বসে থাকার সময় নেই এখন।
একটা গাড়ি নিয়ে আমি ও জ্যাঠতুতো দাদা ছুটে গেলাম উলুবেড়িয়া র উদ্দেশ্যে। পথ টা মনে হচ্ছিল যেন অন্তহীন।

থানায় পৌছাতে ওসি বললেন উলুবেড়িয়া হাসপাতালে যেতে। ওখানেই নাকি পাবো বাবাকে।
কাছেই হাসপাতাল। ছুটলাম বুকে অনেকে আশা নিয়ে। স্থানীয় জনতা থিকথিক করছে হাসপাতালের বাইরে। আমরা পৌছাতেই স্থানীয় নেতা গোছের কিছু লোক পৌছে দিল আমার বাবার কাছে। সাদা চাদরে মাথা থেকে পা অব্ধি সারাটা শরীর মোড়া। হাসপাতাল সুপারের তত্বাবধানে ওই দেহ টা শনাক্ত করতে হবে। স্বীকার করছি, চুড়ান্ত স্বার্থপর হয়েছিলাম আমি ওই একটি বার। ঈশ্বর কে ডাকছিলাম চাদর সরালে যেন অন্য কোন মুখ দেখি। ঈশ্বর কথা রাখেননি। এরপর আইনগত সমস্ত জটিলতা। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আমার বাবা তখন বডি হয়ে লাশকাটা ঘরে শায়িত।

চার বন্ধু যারা মর্নিং ওয়াকের সাথী ছিলেন তারা একসাথেই চলে গেলেন। আমাদের পরিবারের কাছে এই চলে যাওয়াটা অনেকটা হারিয়ে যাওয়ার মতন। সত্যি বলছি আজও কেমন ঘোরের মধ্যে থাকি যখন দিনটার কথা মনে পড়ে।

ওই দিন সড়ক দুর্ঘটনায় একসাথে প্রান হারিয়েছিলেন মর্নিং ওয়াকের চার অতি সজ্জন বন্ধু, আমার বাবা সমর মুখোপাধ্যায়, তাপস বিশ্বাস, শ্যামল দাশ ও সমীর বাগ। সকলেরই বয়স ছিল ষাট থেকে সত্তরের ভিতর। প্রত্যেকেই স্থানীয় বাসিন্দা। সেদিন শোকাচ্ছন্ন হয়েছিল আরিয়াদহ।

বাবা, যেখানেই থাকো। ভাল থেকো। চিরশান্তিতে থেকো।
মর্নিং ওয়াকের কাকুরা, আপনারাও ভাল থাকবেন। চিরশান্তি তে থাকবেন।

প্রনাম।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ধান্দাবাজ

অশালীন হলে তুমি
আমি তবু সাধু,
আমি তো জয়ীর দলে
তুমি হেরো শুধু।

ফুরিয়েছে প্রয়োজন
মিছরি মুড়ির এক দর,
সম্মান কি আশা করে নি
বাবলু সাঁতরার পরিবার।

বন্ধু ছিলে সুখের দিনে
ছাড়লে সঙ্গ আজ
অসময়ে তুমি ভীষন রকম
হলে ধান্দাবাজ।

বিষ ঢুকেছে মনের ঘরে
রাম রহিমের ছুতো
জাতের নামে বজ্জাতি আজ
রাজনীতিকের গুঁতো।

রামের নামে জয়ধ্বনি
বাড়ছে টিআরপি,
রাম রাজত্বের স্বপ্ন দেখাও
শাবাশ বিজেপি।

বড় অস্থির এই অসময়ে
মগজে দাও শান
জাত ধর্মের কুটকচালে
না যায় কোন প্রান।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ৩০ মে, ২০১৯

সমব্যথী

ঘড়িতে সময় রাত নটা দশ। রাতের আরামবাগ লোকাল ছুটে চলেছে হাওড়ার দিকে। কামরা মোটামুটি ফাকাই। কামরায় বাড়ি ফেরতা ক্লান্ত মানুষ। বেশিরভাগই তন্দ্রাচ্ছন্ন। আবার কারো কানে গোঁজা ইয়ারফোন। কারো আবার নজর মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে। কিছু দেহাতি লোক খৈনি ডলছে। আর দুয়েক টা পরিবার চলেছে হাওড়ায় দুরপাল্লার ট্রেন ধরবে বলে।

কামরায় লজেন্স বিক্রি করছেন এক অন্ধ মানুষ। হাতে অন্ধের লাঠি। তবু সটান শরীর। মাঝে মাঝে বলে চলেছেন লজেন্স, এক টাকা পিস, পাচ টাকায় ছয় পিস।  বলাই সার, কিনছে না কেউ। তবু তিনি বলেই চলেছেন, বিক্রির আশায়। ট্রেন বালি স্টেশন ছাড়লো। অন্ধ ব্যক্তি গেটের এক পাশে বসে পড়লেন ক্লান্ত হয়ে।

একটি বছর তিরিশের ছেলে ট্রেনে উঠল বালি স্টেশন থেকে। প্রায় হাত ও পায়ে ভড় করে। সেরিব্রাল পালসি তে আক্রান্ত। হাত পা সম্পূর্ণ বাঁকা। মুখ দিয়ে গোঁঙানির মতন আওয়াজ করে ভিক্ষা চাইতে লাগল। ভুল বললাম, চাওয়ার ক্ষমতা তার নেই, কোন মতে মুখ দিয়ে আওয়াজ করে পেটে হাত দেখাচ্ছে দুটো খাবারের আশায়।
পাশ দিয়ে একটা ট্রেন ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে গেল। ছেলেটি চেঁচিয়েই চলেছে অবিরাম। মোবাইলে ব্যস্ত বা ক্লান্ত মানুষের কানে পৌছাচ্ছে না সেই আওয়াজ। বা পৌছালেও কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। এতো নিত্যদিনের ব্যাপার।
হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন অন্ধ লজেন্স বিক্রেতা। গেটের পাশেই তিনি বসে ছিলেন। ঝোলা থেকে কিছু পয়সা বের করে আওয়াজ শুনে শুনে এগিয়ে এলেন ভিখারি ছেলেটার দিকে। তুলে দিলেন তার সাধ্য মতন সাহায্য। আর গোটা দুয়েক লজেন্স ও একটা পাউরুটি। ভাবলেশহীন ভাবেই আবার গিয়ে বসে পড়ল গেটের পাশেই। ক্লান্ত, শ্রান্ত, মোবাইলে নিবিষ্ট ও তথাকথিত সভ্য মানুষের গালে একটা সপাটে চড় কষিয়ে।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ৩ জুন, ২০১৯

পাঁচ'ই জুন

পাড়ায় ছিল ছোট্ট পুকুর
তাতে হাঁটু জল,
দুপুর বেলায় খাবার পরে
বাসন মাজার ঢল।

পুকুর পাড়ের মাছরাঙারা
পানকৌড়ির দলে,
মাছের লোভে ঘাপটি মেরে
থাকত বসে ডালে।

আর ছিল সেই গাছটা সতেজ
সবুজ কচি পাতা,
গাছের কোলে বাঁধতো বাসা
চন্দনা আর তোতা।

কাঠবিড়ালি, চড়াইপাখি
প্রজাপতির ঝাঁকে,
প্রত্যেকদিনই মরছে ওরা
সভ্যতার এই বাঁকে।

থাকবে কোথায় বুলবুলি
এই অট্টালিকার ভিড়ে,
ঘুম ছুটেছে ময়না, টিয়ার
মৃত্যু রয়েছে ঘিরে।

কাঠঠোকরার ঠক ঠক
আর রাতে ব্যাঙের ডাক,
এই সব ডাকই পেনড্রাইভের
মেমরি জুড়ে থাক।

রেডিয়েশনের তীব্র ঝাঁজে
ডাবের গায়ে দাগ,
দাগ কাটছে বুকের ভেতর
জমে উঠছে রাগ।

বছর বছর আসে ঘুরে
আবার পাঁচই জুন,
পরিবেশ তো খাচ্ছে কুড়ে
উন্নয়নের ঘুণ।


~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ জুন ৪, ২০১৯

দুঃসময়

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? সন্ত্রাসে মরে সেনা মন্ত্রীরা করে হায় হায়। সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? মৃত সেনার ছবি খবরের পাতায় পাতায়। ...