Tuesday, June 4, 2019

সমব্যথী

ঘড়িতে সময় রাত নটা দশ। রাতের আরামবাগ লোকাল ছুটে চলেছে হাওড়ার দিকে। কামরা মোটামুটি ফাকাই। কামরায় বাড়ি ফেরতা ক্লান্ত মানুষ। বেশিরভাগই তন্দ্রাচ্ছন্ন। আবার কারো কানে গোঁজা ইয়ারফোন। কারো আবার নজর মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে। কিছু দেহাতি লোক খৈনি ডলছে। আর দুয়েক টা পরিবার চলেছে হাওড়ায় দুরপাল্লার ট্রেন ধরবে বলে।

কামরায় লজেন্স বিক্রি করছেন এক অন্ধ মানুষ। হাতে অন্ধের লাঠি। তবু সটান শরীর। মাঝে মাঝে বলে চলেছেন লজেন্স, এক টাকা পিস, পাচ টাকায় ছয় পিস।  বলাই সার, কিনছে না কেউ। তবু তিনি বলেই চলেছেন, বিক্রির আশায়। ট্রেন বালি স্টেশন ছাড়লো। অন্ধ ব্যক্তি গেটের এক পাশে বসে পড়লেন ক্লান্ত হয়ে।

একটি বছর তিরিশের ছেলে ট্রেনে উঠল বালি স্টেশন থেকে। প্রায় হাত ও পায়ে ভড় করে। সেরিব্রাল পালসি তে আক্রান্ত। হাত পা সম্পূর্ণ বাঁকা। মুখ দিয়ে গোঁঙানির মতন আওয়াজ করে ভিক্ষা চাইতে লাগল। ভুল বললাম, চাওয়ার ক্ষমতা তার নেই, কোন মতে মুখ দিয়ে আওয়াজ করে পেটে হাত দেখাচ্ছে দুটো খাবারের আশায়।
পাশ দিয়ে একটা ট্রেন ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে গেল। ছেলেটি চেঁচিয়েই চলেছে অবিরাম। মোবাইলে ব্যস্ত বা ক্লান্ত মানুষের কানে পৌছাচ্ছে না সেই আওয়াজ। বা পৌছালেও কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। এতো নিত্যদিনের ব্যাপার।
হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন অন্ধ লজেন্স বিক্রেতা। গেটের পাশেই তিনি বসে ছিলেন। ঝোলা থেকে কিছু পয়সা বের করে আওয়াজ শুনে শুনে এগিয়ে এলেন ভিখারি ছেলেটার দিকে। তুলে দিলেন তার সাধ্য মতন সাহায্য। আর গোটা দুয়েক লজেন্স ও একটা পাউরুটি। ভাবলেশহীন ভাবেই আবার গিয়ে বসে পড়ল গেটের পাশেই। ক্লান্ত, শ্রান্ত, মোবাইলে নিবিষ্ট ও তথাকথিত সভ্য মানুষের গালে একটা সপাটে চড় কষিয়ে।

~ সৌমিক মুখোপাধ্যায়
~ ৩ জুন, ২০১৯

No comments:

Post a Comment

দুঃসময়

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? সন্ত্রাসে মরে সেনা মন্ত্রীরা করে হায় হায়। সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? মৃত সেনার ছবি খবরের পাতায় পাতায়। ...