পল্টুদার গ্যারেজ সকলেই একডাকে চেনে। দেখতে দেখতে বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেল। মনে হয় যেন এই তো সেদিনের কথা। পাড়ার গ্যারাজে ফাইফরমাশ খাটতে খাটতে কাজ শেখা। আগ্রহটা ছিল ছোট্ট থেকেই। কাজেই অল্প দিনের মধ্যে গাড়ির দক্ষ মেকানিক হয়ে উঠল পল্টু।
আগে চারচাকা গাড়ির অত রমরমা ছিল না। বেশির ভাগই এম্বাসেডর ও অল্প কিছু ফিয়াট, অনেক পরে এল মারুতি। আর এখন তো দম ফেলার সময় পায় না। হরেক কিসিমের গাড়ি। তবুও যেকোন গাড়ি একবার খুলেই নিমেষে বুঝে যেত সমস্যাটা ঠিক কোথায়। আর সেই মতন কাজ। পল্টু যেন সাক্ষাৎ বিশ্বকর্মা।
সকাল সাতটায় গ্যারেজ খুলে বন্ধ করতে করতে প্রতিদিন রাত এগারোটা বেজে যায়। ইদানিং তিনজন ছেলেকে কাজে লাগিয়েছে তাও সব্বাই চায় পল্টুদা একবার নিজে চেক করুক। তাতেই যেন সকলের শান্তি।
এক একদিন এক একটা গাড়ি বেশ ভোগায়। সমস্যা খুজে বের করতেই সময় চলে যায়। কিন্তু সারানো হয়ে গেলে এখনো এই বয়সেও বেশ রোমাঞ্চ জাগে।
মিউনিসিপালিটির এম্বুলেন্সটা গতকাল থেকে বেশ ভোগাচ্ছিল। গতকাল অনেক রাত অবধি দেখেও সুরাহা কিছুই হয় নি। তবে আজ সকালে এসেই প্রবলেম টা ধরতে পারল পল্টু। ড্রাইভার এসে নিয়ে যেতে পল্টু একগ্লাস চা খেয়ে আয়েস করে বিড়ি ধরাল। তিনটে ছেলে এখন কাজ করছে।
ইদানীং শরীরটা ভাল যাচ্ছে না।সকাল থেকেই আজ কেমন যেন মাথা ধরা ভাব, ঘাড়ে ব্যাথা। বেলা হতে ব্যাথাটা বাড়তে লাগল। আজ গ্যারেজ না খুললেই ভাল হত। এই সব ভাবতে ভাবতেই শরীরটা একেবারে ছেড়ে দিল। টুল থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল বিশাল শরীরটা।
তিনটে ছেলে দৌড়ে এসে শুইয়ে দিল মাটিতে। একজন তড়িঘড়ি করে সাইকেল নিয়ে ছুটল ডাক্তারখানায়। ডাক্তারবাবু দেখেই বললেন একটা ম্যাসিভ এটাক হয়ে গেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
মিউনিসিপালিটির এম্বুলেন্সটা এল। যেটাকে কিছুক্ষন আগেই সুস্থ করে ফেরত পাঠিয়েছেন পল্টুদা। স্ট্রেচারে তুলে এম্বুলেন্স ছুটল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। প্রায় আধঘন্টার পথ।
সরবিট্রেটটা জিভের নিচে দেওয়াতে এখন কিছুটা সম্বিৎ ফিরেছে। একটু জল খেতে চাইলেন। হুটার বাজিয়ে এম্বুলেন্সটা ছুটে চলেছে। মিনিট পনেরো পথ যাওয়ার পর মাঝ রাস্তায় একটা শব্দ করে গাড়ির স্টার্টটা বন্ধ হয়ে গেল। ড্রাইভার অনেক চেষ্টা করেও স্টার্ট করতে পারছে না। সময় ছুটে চলেছে। ওদিকে স্ট্রেচারে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন বিশ্বকর্মা পল্টুদা।
ড্রাইভার ও হেল্পারের দম ছুটে যাওয়ার অবস্থা। বেগতিক দেখে গ্যারেজের ছেলেটাও আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু কোন চেষ্টাই কাজে আসছে না। গাড়ির ভিতর ছটফট করছে পল্টুদা। কিছু একটা করা দরকার।
এইসময় যে লোকটাকে সবথেকে বেশি দরকার ছিল, সেই এখন গাড়ির ভিতর স্ট্রেচারে শুয়ে অসহায়, প্রায় অচেতন।
হঠাৎ করে ড্রাইভারের চোখ গেল পল্টুদার দিকে। স্ট্রেচারে শুয়েই কালিঝুলি মাখা হাতটা কোনক্রমে তুলে কি যেন ইশারা করছে পল্টুদা। ড্রাইভার ছেলেটা এগিয়ে গেল সেইদিকে।
গাড়ি বন্ধ হওয়ার আওয়াজেই আন্দাজ করেছিলেন সমস্যাটা। হাতের ইশারায় ড্রাইভারকে কোনমতে বুঝিয়ে দিতেই গাড়ি আবার স্টার্ট নিল। অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।
গ্যারেজের ছেলেটা পল্টুদার মুখের কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে চাইল জল খাবে কিনা। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পেল না। মাথাটা হেলে পড়েছে বাঁ দিকে। সারা মুখে প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট। এখন যেন আর কোন যন্ত্রণাই নেই পল্টুদার। চোখের কোল বেয়ে নেমে এসেছে শুকিয়ে যাওয়া জলের ধারা। এই জলধারা নিশ্চিত ভাবেই আনন্দের। এম্বুলেন্সটা এখন হুটার বাজিয়ে ছুটে চলেছে হাইওয়ে দিয়ে তীর বেগে।
জুলাই ২৯, ২০১৮। রোববার।
আগে চারচাকা গাড়ির অত রমরমা ছিল না। বেশির ভাগই এম্বাসেডর ও অল্প কিছু ফিয়াট, অনেক পরে এল মারুতি। আর এখন তো দম ফেলার সময় পায় না। হরেক কিসিমের গাড়ি। তবুও যেকোন গাড়ি একবার খুলেই নিমেষে বুঝে যেত সমস্যাটা ঠিক কোথায়। আর সেই মতন কাজ। পল্টু যেন সাক্ষাৎ বিশ্বকর্মা।
সকাল সাতটায় গ্যারেজ খুলে বন্ধ করতে করতে প্রতিদিন রাত এগারোটা বেজে যায়। ইদানিং তিনজন ছেলেকে কাজে লাগিয়েছে তাও সব্বাই চায় পল্টুদা একবার নিজে চেক করুক। তাতেই যেন সকলের শান্তি।
এক একদিন এক একটা গাড়ি বেশ ভোগায়। সমস্যা খুজে বের করতেই সময় চলে যায়। কিন্তু সারানো হয়ে গেলে এখনো এই বয়সেও বেশ রোমাঞ্চ জাগে।
মিউনিসিপালিটির এম্বুলেন্সটা গতকাল থেকে বেশ ভোগাচ্ছিল। গতকাল অনেক রাত অবধি দেখেও সুরাহা কিছুই হয় নি। তবে আজ সকালে এসেই প্রবলেম টা ধরতে পারল পল্টু। ড্রাইভার এসে নিয়ে যেতে পল্টু একগ্লাস চা খেয়ে আয়েস করে বিড়ি ধরাল। তিনটে ছেলে এখন কাজ করছে।
ইদানীং শরীরটা ভাল যাচ্ছে না।সকাল থেকেই আজ কেমন যেন মাথা ধরা ভাব, ঘাড়ে ব্যাথা। বেলা হতে ব্যাথাটা বাড়তে লাগল। আজ গ্যারেজ না খুললেই ভাল হত। এই সব ভাবতে ভাবতেই শরীরটা একেবারে ছেড়ে দিল। টুল থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল বিশাল শরীরটা।
তিনটে ছেলে দৌড়ে এসে শুইয়ে দিল মাটিতে। একজন তড়িঘড়ি করে সাইকেল নিয়ে ছুটল ডাক্তারখানায়। ডাক্তারবাবু দেখেই বললেন একটা ম্যাসিভ এটাক হয়ে গেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে।
মিউনিসিপালিটির এম্বুলেন্সটা এল। যেটাকে কিছুক্ষন আগেই সুস্থ করে ফেরত পাঠিয়েছেন পল্টুদা। স্ট্রেচারে তুলে এম্বুলেন্স ছুটল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। প্রায় আধঘন্টার পথ।
সরবিট্রেটটা জিভের নিচে দেওয়াতে এখন কিছুটা সম্বিৎ ফিরেছে। একটু জল খেতে চাইলেন। হুটার বাজিয়ে এম্বুলেন্সটা ছুটে চলেছে। মিনিট পনেরো পথ যাওয়ার পর মাঝ রাস্তায় একটা শব্দ করে গাড়ির স্টার্টটা বন্ধ হয়ে গেল। ড্রাইভার অনেক চেষ্টা করেও স্টার্ট করতে পারছে না। সময় ছুটে চলেছে। ওদিকে স্ট্রেচারে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন বিশ্বকর্মা পল্টুদা।
ড্রাইভার ও হেল্পারের দম ছুটে যাওয়ার অবস্থা। বেগতিক দেখে গ্যারেজের ছেলেটাও আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু কোন চেষ্টাই কাজে আসছে না। গাড়ির ভিতর ছটফট করছে পল্টুদা। কিছু একটা করা দরকার।
এইসময় যে লোকটাকে সবথেকে বেশি দরকার ছিল, সেই এখন গাড়ির ভিতর স্ট্রেচারে শুয়ে অসহায়, প্রায় অচেতন।
হঠাৎ করে ড্রাইভারের চোখ গেল পল্টুদার দিকে। স্ট্রেচারে শুয়েই কালিঝুলি মাখা হাতটা কোনক্রমে তুলে কি যেন ইশারা করছে পল্টুদা। ড্রাইভার ছেলেটা এগিয়ে গেল সেইদিকে।
গাড়ি বন্ধ হওয়ার আওয়াজেই আন্দাজ করেছিলেন সমস্যাটা। হাতের ইশারায় ড্রাইভারকে কোনমতে বুঝিয়ে দিতেই গাড়ি আবার স্টার্ট নিল। অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।
গ্যারেজের ছেলেটা পল্টুদার মুখের কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে চাইল জল খাবে কিনা। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পেল না। মাথাটা হেলে পড়েছে বাঁ দিকে। সারা মুখে প্রশান্তির ছাপ স্পষ্ট। এখন যেন আর কোন যন্ত্রণাই নেই পল্টুদার। চোখের কোল বেয়ে নেমে এসেছে শুকিয়ে যাওয়া জলের ধারা। এই জলধারা নিশ্চিত ভাবেই আনন্দের। এম্বুলেন্সটা এখন হুটার বাজিয়ে ছুটে চলেছে হাইওয়ে দিয়ে তীর বেগে।
জুলাই ২৯, ২০১৮। রোববার।