Sunday, September 30, 2018

অনুরোধ

২০১০ সালের আজকের দিনেই BIFR এ চলে গেছিল এই সংস্থাটি। শেষের শুরু আজকের এই দিন টা থেকেই।

দেখতে দেখতে অনেক গুলো বছর পেরিয়ে গেলো। ছবি গুলো আজও চোখের সামনে ভেসে আসে। পুজোর আগে বিশ্বকর্মা পুজোর জাঁকজমক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বোনাস পেয়ে শ্রমিক কর্মচারী দের আনন্দচ্ছল মুখ। সব কেমন যেন হারিয়ে গেলো।

আরিয়াদহ, কামারহাটি, দক্ষিণেশ্বর অঞ্চলে ইন্ডিয়া ফয়েলস লিমিটেড এর কথা বলছি। এলাকায় বয়স্ক জনেরা ভেনেস্তা নামেই এখনো অনেকে ডাকেন। যদিও এই নামকরন ১৯০৫ সালের। শেষমেশ নাম বদল হয়ে হল এস ডি এলুমিনিয়াম।

এলুমিনিয়াম ফয়েল প্রস্তুতকারক এই সংস্থা আমাদের অঞ্চলের একটা ল্যান্ডমার্ক ছিল। ব্রিটিশ আমলের এই কোম্পানি তে কাজ করার স্বপ্ন দেখতো শিক্ষিত মানুষজন। জীবিকার্জনের জন্য এলাকায় প্রসিদ্ধি ছিল এই সংস্থার।

পরবর্তী সময়ে খৈতান গোষ্ঠী যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন এই সংস্থাকে। এ সবই এখন ইতিহাস।

ভীষন ভীষন খারাপ লাগে যখন দেখি এই রকম নামী একটা কোম্পানি চোখের সামনে ধংস্ব হয়ে গেল। ভুল বললাম নস্ট করে দেওয়া হল। ম্যানেজমেন্ট ভুল, নাকি শ্রমিকদের দিশাহীনতা, নাকি অন্য কিছু তা জানি না। তবে ভিতরে ভিতরে রক্তাক্ত হই বন্ধুস্থানীয়দের দেখে। যারা এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।

শুনতে পাই বকেয়া টাকা, গ্রাচুইটির টাকা, পিএফ এর জমানো টাকা কিছুই এনারা পান নি। কবে পাবেন তাও বোধহয় কেউ জানেন না। গা শিঊরে ওঠে। মাইনে পেয়েও যেখানে এই দুর্মুল্যের বাজারে সংসার চালানো কস্টকর, সেখানে এনাদের চলে কি করে। অনেককেই দেখি বিকল্প কাজের সন্ধান করতে।

খুব খারাপ লেগেছিল দেখে যে এনারা কেনো কোনো আন্দোলনে গেলেন না। রথতলার মোড়ে কিছুদিন লিফলেট বিলি করে, কিছুদিন মাত্র অবস্থান করে, ধর্মতলায় লিফলেট বিলি করে কেন এনারা ক্ষান্ত হলেন? নিজেদের কথা আরো বৃহত্তর পরিমন্ডলে ছড়িয়ে দিলেন না কেন? কেন মাত্র এক দু দিন বাজারী কাগজে ছাপা হল এনাদের দুর্দশার কথা। যেখানে শিল্প বন্ধের জন্যে দীর্ঘ দিন অবস্থান বিক্ষোভ হয়, সেখানে জলজ্যান্ত একটা কারখানা এভাবে কেন বন্ধ হয়ে গেলো? আরো তেজদ্বীপ্ত হওয়া যেত না কি?

জানি প্রশ্ন গুলো সহজ।
কিন্তু আমার কাছে উত্তর জানা নেই। কারোকাছে থাকলে জানাবেন।

যারা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তাদের কাছে আমার বিনম্র অনুরোধ, একটু মানবিকতা দেখান। কারখানার গেটে নরনারায়ন সেবার মতন খাবার ব্যবস্থা না করে, সম্মানের সাথে মাথা তুলে বাঁচতে সাহায্য করুন কর্মচারীদের। ভবিষ্যতে কারখানা খোলার সম্ভবনা যদি একান্ত নাও থাকে, এনাদের প্রাপ্য বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাটা অন্তত করুন।

সব্বাই ভাল থাকলে, তবেই আমরা সকলে ভাল থাকব।
পুজো আসছে, রাস্তায় রাস্তায় আলো লাগছে। কিন্তু এত আলোতেও, এলাকার কর্মহীন  মানুষের মনের অন্ধকার দূর হবে কি?

পরিশেষে বলি ইন্ডিয়া ফয়েলস ছাড়াও অন্যান্য অনেক কারখানা আজ এই এলাকায় বন্ধ হয়ে আছে। আর্থ সামাজিক অবস্থা ভয়াবহ। অনুরোধ কোন রাজনীতি খুঁজবেন না এই লেখায়। যদি কিছু মাত্র ভুল বলে থাকি, তবে ভুল টা শুধরে দেবেন এই আশা রাখি।


সৌমিক মুখোপাধ্যায়
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

Saturday, September 1, 2018

গন্ধ

অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে দিনুকে শুধুমাত্র তার ওই বোঁচা চ্যাপ্টা নাক টার জন্য। ছেলেবেলায় মা ঠাকুমা অনেক চেষ্টা করেছিলেন, যদি নিয়মিত তেল মালিশ করে নাক টাকে কিছুটাও লম্বা করা যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছুটি হয় নি।

ইস্কুলে পড়ার সময় বন্ধুরা কেবল হাসাহাসি করত। পাড়ার মেয়েরাও আড়ালে তাকে দেখে হাসত। সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকত দিনু। শুধুমাত্র ওর এই  খ্যাঁদা নাকটার জন্য।

কারো বিষয়ে কারনে অকারনে কখনোই নাক গলাতো না দিনু। নাকই নেই, কাজেই তা গলানোর প্রশ্নও নেই। সেদিক থেকে সে ছিল নিশ্চিন্ত।

তবে, ছেলেবেলায় মায়ের গায়ের গন্ধটা কিন্তু আজো নাকে লেগে আছে। মমতা মাখা উনুনের ধোঁয়া লেগে থাকা অদ্ভুত এক গন্ধ। মাকে হারিয়েছে সেই কোন কালে, বাবাকে তো চোখেই দেখেনি। কিন্তু এখনো মাঝে মাঝে সেই গন্ধটা পায় দিনু। বিশেষ করে খুব ভোর বেলায়। মা ফিরে ফিরে আসে সেই গন্ধটার মধ্যে দিয়ে।

ভাত ফোটানোর গন্ধ, তেলেভাজার দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নাকে ভেসে আসা গন্ধ, সদ্যজাত রসগোল্লার গন্ধ, রোল কাউন্টার থেকে ভেসে আসা ডিম ভাজার গন্ধ শুঁকেই পেট ফুলে ওঠে দিনুর। কেনার তো আর পয়সা নেই। ভাঁড়ে মা ভবানি।

গ্রীষ্ম কালে মাটি তেতে ওঠার গন্ধ, বিষ্টির পর মাটির সোঁদাসোঁদা গন্ধ, দুগগা পুজোর ঠিক পরে পরেই ছাতিম ফুলের গন্ধ, শীতকালে সোয়েটারের গন্ধ প্রতিটাই ভীষন রকম আলাদা। প্রতিটাই খুব মায়াবি। কালজয়ী।

চল্লিশ পেরোল গত জুনে। কিন্তু এখনো নাকে লেগে আছে রেশন দোকানের পত্রালি খাতার গন্ধ। গম ভাঙানোর গন্ধ। হঠাত করে নাকে আসা কোন ধুপের গন্ধে মনটা আকুলি বিকুলি করে ওঠে। আর সেই অগরুর গন্ধটা যেটা মায়ের শরীরের ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল খাটে তোলার পর। অসহ্য অতি অসহ্য সেই গন্ধ।

এখন দিনরাত চায়ের দোকানেই কাটে দিনুর। পাড়ার ছোট ছোট ছেলেরা ঢিল ছুড়ে মারে, রাগায়, ভেঙায়।

ইদানীং পাড়ার আস্তাকুঁড়ের খাবারে ছেলেবেলার গন্ধ খোঁজার চেষ্টা করে দিনু রোজ। কোন খাবারের দোকানের সামনে দাঁড়ালে গায়ে জল ছিটিয়ে তাড়িয়ে দেয় লোকে। যদিও তাতে দিনুর কিছুটা পেট ভরে। সর্দি হলেই তার যত কষ্ট।

অগাস্ট ২৮, ২০১৮। মঙ্গলবার।

পার করেগা...

অনেক শ্রাবন দেখলাম এই জীবনে। ছেলেবেলায় শ্রাবন বলতে ছিল সারা মাস জুড়ে  বাইশ তারিখের প্রস্তুতি। সকলের আদরের, প্রানের ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। গান, কবিতা, নাটক এই সব নিয়ে আট থেকে আশির মেতে থাকা। পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট মঞ্চ তৈরি করে শ্রদ্ধা জানানো।

ইদানীং শ্রাবন এলেই পথ চলতি সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। বিশেষ করে শনিবার সন্ধ্যের পর থেকেই রাজপথ চলে যেতে থাকে ভক্তদের হাতে। হঠাৎ করে মানুষের মধ্যে এত ভক্তি ভাব এল কোথা থেকে এই ভাবনা মনে চলে আসে বারবার।

এইসব ভক্তদের উতসাহিত করার জন্য পথের ধারে সারি সারি মনোরঞ্জন এর পসরা। অঢেল খাবারের আয়োজন।

আফশোস হয়, যারা এই খাবার এর আয়োজন করেন, তারা পালা করে সারা বছর ধরে যদি এই প্রচেষ্টা চালান, তাহলে গরীব মানুষ গুলো দুমুঠো খেতে পারে।

প্রশাসক যিনিই হোন, ধর্মকে ঘাঁটাতে কেউই সাহস পান না। তাই এদের বাড়বাড়ন্ত বেড়েই চলে। কি অসম্ভব এনার্জি লেভেল। তারিফ না করে পারা যায় না। কিন্তু সবটাই বাবার মাথায় ঢেলে শেষ হয়ে যায়।

তারস্বরে মাইকে বাবার জয়গান, সাথে মজুত সব রকমের বাবার প্রসাদ। বাচ্চা থেকে মাঝবয়সী সবাই প্রসাদ প্রার্থী। কাঁধে বাঁক। মুখ ভরতি লালথুতু যা মাঝে মাঝে ভরিয়ে দিচ্ছে রাজপথ। রাস্তা জুড়ে প্লাস্টিকের গ্লাস, কাপ, শালপাতার ঠোঙা।

এ কোন পথে চলেছে কোলকাতা? বাংলাভাষী সাধারন মানুষজন নিজেদের সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে মেতে উঠছে অন্য রাজ্যের সংস্কৃতি নিয়ে।

এ এক নতুন কালচার।
এক নতুন রাজনীতি।
এক নতুন ভীতি।
এক নতুন দুঃসময়।

১২ আগস্ট, ২০১৮। রোববার।

দুঃসময়

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? সন্ত্রাসে মরে সেনা মন্ত্রীরা করে হায় হায়। সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? মৃত সেনার ছবি খবরের পাতায় পাতায়। ...