Monday, April 30, 2018

পাগলি তোর জন্য

অসংখ্য মানুষের যাতায়াত এই পথ দিয়ে। কিন্তু কেউ ফিরেও তাকায় না বিশুর দিকে। বয়স প্রায় চল্লিশ। অবিন্যস্ত চুলে উকুনের পরিপাটি সংসার। আর চোখের কোলে পিচুটি। কত বছরের স্নান না করা শরীরে কালো কালো ছোপ। আস্তাকুড় থেকে যা পায় তাই কুড়িয়ে খেয়ে কাটিয়ে দেয়। কদম গাছ টার নিচেই বসে থাকে প্রায় সারাটাদিন।

দিন কয়েক হল, একটা অল্প বয়সি মেয়েও এসে জুটেছে এলাকায়। কতই বা বয়স হবে, পনেরো কি ষোল। চালচুলো হীন। কোথা থেকে যে এসে জুটেছে কে জানে? আস্তাকুড়ের পাশেই ঘুরঘুর করে, কিছু খাবার পাওয়ার আশায়। বিশু দেখলেই তেড়ে যায়, দাঁত খিচিয়ে ওঠে আর বিড়বিড় করে গালি দেয় পাগলিটাকে। ওর খাবারে যাতে ভাগ না বসাতে পারে সেই জন্য।

পাড়ার বয়স্ক মহিলারা মাঝে মাঝেই পুরানো জামা কাপড় দেয় মেয়েটিকে, কিন্তু ও গায়ে কিছু রাখতে চায় না। ওর লাজ লজ্জার বালাই নেই।

রাত বাড়লেই কিছু বখাটে ছেলে এসে ইদানিং আড্ডা বসায় ওই চত্তরে। খুব বেশি লোকজন রাতে এইদিকটাতে আসে না। সবাই সব জানে বোঝে কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। সব দেখেও না দেখার ভান করে সবাই। অকথ্য গালি গালাজে সরগরম হয়ে ওঠে কদমতলার আশপাশ। বিশু পাগলা রোজই রাতে শুয়ে শুয়ে দেখে তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে।

সেদিন রাতে কিছুই খাওয়া জুটলো না বিশুর। আজ আর কোন গেরস্ত কিছু উচ্ছিষ্ট ফেলে যায়নি পাড়ার আস্তাকুড়ে। টিউবওয়েল থেকে জল খেয়েই শুয়ে ছিল। পাগলি টাও গিয়ে কিছুক্ষন খাবার খুজলো। কিন্তু কিছু না পেয়ে বসে রইল।
এক এক দিন এরকম যায়।

গোটা তিনেক বাইকের আওয়াজ এগিয়ে আসছে এদিকেই রোজকার মতন। বখাটে গুলো  বাইক থেকে নামল আর হইচই করতে লাগলো। পাগলি টাকে দেখে ওরা একটা প্যাকেট থেকে কিছু খাবার ছুড়ে দিল। আর বিশ্রী ভাবে হাসাহাসি করতে লাগল। খাবারটা পেয়ে হামলে পড়ে খেতে লাগল পাগলিটা।

পেটের সাথে সাথে এখন গাও জ্বলতে লাগলো বিশুর। হঠাত দেখলো নীল জামা পড়া একটা ছেলে পাগলি টার হাত ধরে টানছে বিশ্রী ভাবে। অদ্ভুত আওয়াজ করে হাসতে লাগলো পাগলিটা। না কি পাগলিটার কান্নার আওয়াজ। বিশু এত কিছু বোঝে না। কিন্তু এটুকু বুঝলো সভ্যতার সীমা ছাড়াতে চলেছে।

একটা আস্ত ইট পড়েছিল কদমগাছের গোড়ায় । বিশু ওটাকে হাতে তুলে দৌড়ে গিয়ে সজোরে মারল ছেলেটার মাথায়। নিমেষে রক্তে লাল হয়ে গেল জায়গাটা। এত অকস্মাৎ ঘটে গেল ঘটনাটা যে কিছু বোঝার আগেই বাকি ছেলেগুলো বাইক নিয়ে পালাল জায়গা ছেড়ে। নীল জামা ছেলেটার নিথর শরীর টা পড়ে রইল ওখানেই।

ওদের ফেলে যাওয়া খাবারের একটা প্যাকেট পড়ে ছিল কাছেই। বিশু কুড়িয়ে নিয়ে গোগ্রাসে খেতে শুরু করল।  পেটের জ্বালার সাথে গায়ের জ্বালাটাও জুড়িয়েছে এখন। পাগলি টাও খাবার টা প্রায় শেষ করে ফেলেছে ইতিমধ্যে।

জল ভরা চোখে ফেলফেল করে পাগলিটা তাকিয়ে রইল তার আস্তাকুড়ের প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে।

বাইক গুলো আবার ফিরে আসছে। বাইকের আলো তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো। কতদিন পর পেটভরে আজ খেতে পেল বিশু পাগলা।

সৌমিক মুখোপাধ্যায়
২৬ এপ্রিল ২০১৮

No comments:

Post a Comment

দুঃসময়

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? সন্ত্রাসে মরে সেনা মন্ত্রীরা করে হায় হায়। সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? মৃত সেনার ছবি খবরের পাতায় পাতায়। ...