Monday, April 30, 2018

তুবড়ি

কালিপুজোর সময়টা এলেই রতন পাড়ার হিরো হয়ে ওঠে। নাহলে বছরের অন্য সময়ে কেউ তাকে পাত্তাও দেয়না। দেবেই বা কেনো?  ছেলেবেলায় বাবা কে হারিয়েছে। আর মা লোকের বাড়ি বাসন মেজে কোন মতে কষ্টে দিন গুজরান করেছেন। লেখাপড়া শেখার সু্যোগ কখনও হয়নি। 
বছর দশেক আগে মা'ও চলে গেছে দুদিন এর জ্ব্ররে ভুগে।

পাড়ার মোড়ের সাইকেল এর দোকানে হেল্পার এর কাজ করে দিন কাটে আর রাতে সস্তা মদের নেশা। তাই সকলে তাকে এড়িয়ে চলে।

কিন্তু রতনের হাতে তুবড়ি কথা বলে। দুগগা পুজো শেষ হবার সাথে সাথেই পাড়ার ভদ্র লোকেরা ওর আশে পাশে ঘুরঘুর করে। বাড়ির জন্য তুবড়ির বায়না নিয়ে। এইসময় রতনের খাতিরই আলাদা। সে কাউকে ফিরিয়ে দিতে চায় না। যতটা সম্ভব সকল কে খুশি করে। যা টাকা পায়, তা দিয়ে রাতের বেলা নেশা করে।
কেউ তো কিছু বলার নেই ওকে।

দে বাড়ির ছোট মেয়ে রুমা রতনেরই বয়সি। ছোট্ট থেকেই দেখছে তাকে। লক্ষী প্রতিমার মত মুখ। আর গুনে সরস্বতী। ওকে দেখলে রতন এর যে ঠিক কি রকম অনুভুতি হয় তা বলে বোঝানো অসম্ভব। কত দিন ভেবেছে যে সবাই তো আসে ওর কাছে তুবড়ির বায়না নিয়ে কিন্তু ওই বাড়ির কেউ আসে না কেন। সেরা তুবড়িটা তাহলে বানিয়ে দেখিয়ে দিত রুমা'কে।

রতন এর স্বপ্ন আর পুরন হয় না। বছর ছয়েক আগে রুমার বিয়ে হয় কলকাতার এক ডাক্তারবাবু'র সাথে। পাড়াশুদ্ধ লোক খেতে গেছিল দে বাড়িতে। রতন কেও নেমন্তন্ন করেছিল রুমার বাবা। পাড়ার সকলের মতন। কিন্তু রতন যায় নি, যেতে মন চায় নি। ওই দিন সকাল বেলা পাড়ার মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছিল রতন। কেন কে জানে? আর ওই রাতে নেশাও করেছিল খুব।

এইবছর নিজের চোখ কে রতন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। রুমা নিজে তুবড়ির বায়না নিয়ে এল রতনে'র কাছে। সাথে ওর ছোট্ট মেয়েটাকেও নিয়ে এসেছিল। যেমনি মা তেমনি মেয়ে। যেন পুতুল। এবছর আর তুবড়ির বেশি বরাত নিল না। সব মন প্রান দিয়ে তার স্বপ্ন পুরন করতে লাগল। এমন তুবড়ি বানাবো এবার, মুগ্ধ করে দেব রুমাকে।

কালিপুজোর দিন দুয়েক আগেই রুমাদের বাড়ি গিয়ে সব তুবড়ি পৌছে দিয়ে এল রতন।

এত আনন্দ জীবনে পায় নি সে। আজ ওর স্বপ্ন পুরনের দিন। ভাবতে লাগল যে ওর তুবড়ি জ্বালানোর পর রুমা'র মুখের প্রশান্তি র ছবি।

দুঃসংবাদ টা এসে আছড়ে পড়ল কালিপুজোর পরের দিন সক্কাল বেলা। খবর এল দে বাড়ি তে গতরাতে তুবড়ি ফেটে রুমা'র মুখ পুরো ঝলসে গেছে। কলকাতার এক নামী নার্সিংহোম এ ভরতি করা হয়েছে তাকে। নিতান্তই দুর্ঘটনা। কেউ একবার এর জন্য রতন কে দোষারোপও করে নি। কিন্তু এক অব্যক্ত যন্ত্রনা কূড়ে খেতে লাগল তাকে।
 
ভাইফোঁটা র দিন সকালে রতন এর ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ টা রেল লাইনের ধার থেকে সনাক্ত করল রেল পুলিস।



সৌমিক মুখোপাধ্যায়
২০।০৪।২০১৮

No comments:

Post a Comment

দুঃসময়

সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? সন্ত্রাসে মরে সেনা মন্ত্রীরা করে হায় হায়। সত্যি কি আমাদের কিছু আসে যায়? মৃত সেনার ছবি খবরের পাতায় পাতায়। ...