বেশ কয়েক বছর হল, এখন আর কচি কচি ডাল পালাগুলো আমার খুব একটা ধারে কাছে আসেনা। সেই যেদিন থেকে আমার পাতা গুলো হলুদ হতে শুরু করেছিল, ডাল গুলো শুকিয়ে আসছিল। নেহাত মানুষের মত ওরা দূরে সরিয়ে দিতে পারে না তো তাই গাছের একটা পরিত্বক্ত অংশ হিসেবেই দিন কেটে যাচ্ছিল আমার। আমিও মায়া ত্যাগ করছিলাম ধীরে ধীরে।
গত কিছুদিন হল ছোট্ট চড়াই টা আমারই একটা ডালে বাসা তৈরি করেছিল ডিম পাড়বে বলে। আনন্দে মন ভরে উঠছিল আমার। বেশ আনন্দে ছিলাম এই কদিন। সখ্যতা গড়ে উঠেছিল চড়াইটার পরিবার এর সাথে। ওদের আর কি দোষ? ও তো আর জানে না যে যেখানে ও বাসা বাঁধছে তার মরন আগত প্রায়। কত সুখ দুখখের কথা হত আমাদের।
দিন সাতেক আগে চারটি ডিম পেড়েছিল মা চড়াই। ডিম তো নয়, যেন এক আকাশ মায়া। তারপর থেকেই ক্রমাগত তা দিয়ে বসে থাকা। মায়ের স্নেহ বলে কথা। তারপর ছানাদের ফুটে বেড়ানো। আমার পরিত্বক্ত ডালে নতুন জীবনের উৎসব।
কালকের নিষ্ঠুর কালবৈশাখী ঝড়টা সব লণ্ডভণ্ড করে দিল। আমারতো সময় হয়েই এসেছিল। দমকা হাওয়ায় আমি ভেঙে পড়লাম চড়াইয়ের বাসা টাকে সাথে নিয়ে। সাথে চার চারটি ফুটফুটে ছানা।
আমার শুকনো ডাল ও হলুদ হয়ে যাওয়া পাতা দিয়ে আঁকড়ে ছিলাম বাসাটাকে। কিছুতেই হার মানি নি। একটা ছানার গায়েও আচর লাগতে দিই নি। ঝড় থামার পর রাতের অন্ধকারে চারটি ছানাকে নিয়ে সারারাত বসে পাহারা দিল বাবা ও মা চড়াই। ভোরের আলো ফোটার সাথেই ওরা আশ্রয় নিল মিত্তির বাড়ির ঘুলঘুলিতে। ওদের নতুন বাসায়।
আজ যখন সকাল বেলা মিউনিসিপ্যালিটির লোকেরা আমার ডালপালা গুলো কূড়িয়ে নিয়ে গেলো, অনেক টা দূর অবধি ছোট্ট চড়াই টা গেল আমার সাথে। আমাকে শেষ বিদায় জানাতে।
ভাল থাকিস রে বিচ্ছু গুলো। তোদের জন্য এক আকাশ ভালবাসা ও আদর রইল।
সৌমিক মুখোপাধ্যায়।
এপ্রিল ১৮, ২০১৮। বুধবার।
No comments:
Post a Comment